মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা

Kerala amoeba cases:নাকের মধ্য দিয়ে আক্রমণকারী এই ঘাতক সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

Share This Post

কেরালা এক নতুন এবং ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্য সংকটের মুখোমুখি। Naegleria fowleri নামক একটি বিরল এককোষী জীব, যা সাধারণ মানুষের কাছে “মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা” নামেই বেশি পরিচিত, রাজ্যজুড়ে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এই রোগে মৃতের সংখ্যা ১৯-এ পৌঁছেছে এবং মোট ৬৯টি সন্দেহভাজন বা নিশ্চিত সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এই সংখ্যাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক, কারণ বিশ্বজুড়ে ১৯৬২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মাত্র ৪৮৮টি এমন সংক্রমণের কথা নথিভুক্ত করা হয়েছে।


এই ঘাতক প্যারাসাইটটি আসলে কী?

এই সংক্রমণের নাম প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনগোএনসেফালাইটিস (PAM)। এটি Naegleria fowleri নামক একটি এককোষী জীব দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা সাধারণত উষ্ণ ও স্থির মিষ্টি জলে বেঁচে থাকে—যেমন পুকুর, হ্রদ, এবং ক্লোরিনবিহীন সুইমিং পুল বা অপরিষ্কার জলের ট্যাঙ্ক।

এই রোগের সংক্রমণ শুধুমাত্র তখনই ঘটে যখন দূষিত জল জোর করে নাকের মধ্যে প্রবেশ করে। এরপর এই জীবটি গন্ধের স্নায়ু (olfactory nerve) বেয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায় এবং মস্তিষ্কের কোষগুলিকে ধ্বংস করতে শুরু করে। এর ফলে মস্তিষ্কে মারাত্মক প্রদাহ বা ফোলাভাব সৃষ্টি হয়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই রোগটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না এবং দূষিত জল পান করলেও এই রোগ হয় না। সংক্রমণ কেবল নাকের মাধ্যমেই ঘটে থাকে।

আরও পড়ুন: কিডনিতে পাথর (Kidney Stone): কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা, খাদ্যাভ্যাস, ওষুধ ও বিস্তারিত


রোগের লক্ষণ ও মারাত্মক পরিণতি

kerala amoeba সংক্রমণের পর সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। প্রাথমিক লক্ষণগুলি সাধারণ জ্বরের মতোই, যার মধ্যে রয়েছে:

  • জ্বর
  • তীব্র মাথাব্যথা
  • বমি বমি ভাব এবং বমি

কিছুদিন পরেই পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে এবং আরও গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন:

  • ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া
  • বিভ্রান্তি বা মানসিক ভারসাম্যহীনতা
  • খিঁচুনি
  • হ্যালুসিনেশন (অলীক কিছু দেখা বা শোনা) এবং অবশেষে রোগী কোমায় চলে যান।

kerala amoeba এই রোগের ভয়াবহতা এতটাই বেশি যে এর মৃত্যুহার ৯৭%। অর্থাৎ, আক্রান্ত ১০০ জনের মধ্যে ৯৭ জনই মারা যান। গত ছয় দশকে বিশ্বজুড়ে মাত্র ২০ জনেরও কম রোগী এই রোগ থেকে বেঁচে ফিরেছেন, কিন্তু তাদের বেশিরভাগই স্থায়ীভাবে স্নায়বিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন।

আরও পড়ুন: Frozen Shoulder |ফ্রোজেন শোল্ডার-সমস্যা ও চিকিৎসা


কেরালায় কেন এই আতঙ্ক?

সাধারণত, এই রোগ বিক্ষিপ্তভাবে এক বা দুটি করে দেখা যায়, যা কোনো একটি নির্দিষ্ট দূষিত জলাশয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে। কিন্তু কেরালায় তিরুবনন্তপুরম, কোঝিকোড়, ত্রিশূর এবং মালাপ্পুরমের মতো বিভিন্ন জেলায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে, যার কোনো একক উৎস এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কেরালায় উন্নত রোগ নির্ণয় ব্যবস্থার কারণে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ধরা পড়ছে। সাধারণ জ্বর বা মেনিনজাইটিসের মতো লক্ষণ হওয়ায়, অ্যামিবার সংক্রমণের কথা বিশেষভাবে সন্দেহ না করলে এই রোগটি সহজেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।


প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

এই রোগের কোনো নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন বা প্রমাণিত প্রতিকার নেই। কিছু অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সংমিশ্রণে ব্যবহার করা হয়, তবে তাতে সাফল্যের হার অত্যন্ত কম। তাই, এই রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধই একমাত্র উপায়।

কেরালা সরকার ‘জল জীবন’ (জলই জীবন) নামে একটি রাজ্যব্যাপী সচেতনতামূলক অভিযান শুরু করেছে। এর আওতায় কুয়ো, সুইমিং পুল এবং জলের ট্যাঙ্কগুলিতে ক্লোরিন দিয়ে জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিষ্কার জলই হলো সবচেয়ে বড় সুরক্ষা। জলের ট্যাঙ্ক বা সুইমিং পুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে (≥ ২.০ মিলিগ্রাম/লিটার) ক্লোরিন ব্যবহার করলে এই অ্যামিবা ধ্বংস করা সম্ভব।


Share This Post