Immunity booster

ইমিউনিটি বাড়াতে নিয়মিত কোন খাবারগুলো খাবেন?

Share This Post

হয়তো আপনি ভাবছেন, কেন আজকাল সবাই ইমিউনিটি বাড়ানোর কথা বেশি বলছে? আসলে আমাদের দেহ প্রতিদিন নানা জীবাণু, ভাইরাস আর সংক্রমণের শিকার হয়। তবে একটি শক্তিশালী ইমিউনিটি সিস্টেম থাকলে শরীর নিজেই এই সব ঝুঁকি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। ভালো খবর হলো, আপনি যদি সঠিক খাবার খান, তাহলে আপনার শরীরের এই প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে এবং অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। চলুন দেখে নেই, সেই ভারতীয় খাবারগুলো কোনগুলো যেগুলো বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে প্রকাশ পেয়ে গেছে যে এগুলো নিয়মিত খেলে ইমিউনিটি বাড়ে।


হলুদ (Turmeric) :

আপনি হয়তো ব্যবহার করছেন হলুদ ? এটা শুধু রান্নাকে রঙিন করে না, বরং আমাদের শরীরেও মন্ত্রের মতো কাজ করে। হলুদের মধ্যে থাকা “কুরকুমিন” নামের উপাদান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে। এটা শরীরের প্রদাহ কমিয়ে দেয়, যেটা আমাদের সর্দি, কাশি আর নানা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে সাহায্য করে। তাই রোজ হালকা পরিমান হলুদ গরম দুধে মিশিয়ে খাওয়া বা রান্নায় নিরবচ্ছিন্নভাবে হলুদ ব্যবহার করা খুব ভালো। এটা আমাদের শক্তি বাড়ায় এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।


আদা (Ginger) :

আদা সেই খাবার যেটা আপনি রান্নাতেই ব্যবহার করেন, কিন্তু জানেন কি এর গুণাগুণ অসংখ্য? আদাতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধের জন্য উপকারী এবং গলার ব্যথা, হজমের সমস্যা কমায়। সর্দি-জ্বরে ঠান্ডা যেমন আদা চা শরীরকে আরাম দেয়। আরেকটা কথা, আদা গরম জলে বা চায়ে মিশিয়ে খেলে গলা ভালো থাকে, ঝর্ণা ও এলার্জিসহ নানা উপসর্গ কমে যায়। তাই আজই আপনার রান্নায় আদার ব্যবহার বেড়ে দিন আর নিজেকে সুস্থ রাখুন।


রসুন (Garlic):

আপনার রান্নায় কি রসুন থাকে? থাকলে খুবই ভালো। কারণ রসুনের ‘এলিসিন’ নামের শক্তিশালী অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি ভাইরাস প্রতিরোধেও কার্যকর। একজন বাড়ির যেকোনো রান্নায় রসুন ব্যবহার করলে তা শুধু স্বাদই বাড়ায় না, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। রসুন ভাজা বা রান্নায় একটু বেশি ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।


আমলা (Indian Gooseberry):

আমলা বলতে বোঝায় একটি ফল যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। আমলাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা ইমিউনিটি বাড়াতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। নিয়মিত আমলার আচার বা আমলার জুস শরীরকে সুরক্ষা দেয় ঠান্ডা, কাশি, থান্ডা লাগা থেকে। তাই ইমিউনিটি বাড়াতে আমলাকে আপনার খাদ্য তালিকায় অবশ্যই রাখতে হবে।


মধু (Honey):

সুস্থ থাকতে আনারস, ফলের সাথে মধু মেশানো খাবেন? বেশ ভালো! মধুতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, যা কখনো কখনো কাশি-বাতাসহ সর্দি কমাতে সাহায্য করে। তবে খেয়াল রাখুন, মধু বেশি নয়, নিয়মিত ছোট পরিমাণে খাবেন।


আরও পড়ুন:পাউরুটি খাওয়া: লাভ না ক্ষতি?

গ্রীন টি (Green Tea):

গ্রীন টিতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরের টক্সিন দূর করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সতেজ রাখে। সাধারণত দিনে এক থেকে দুই কাপ গ্রীন টি পান করা শরীরকে অনেক উপকার দেয়।


নারকেল জল (Coconut Water):

দৈনন্দিন জীবনে নারকেল জল নিয়মিত পান করলে শরীর ভালো হাইড্রেটেড থাকে এবং শরীরের শক্তিকেও বাড়ায়। এতে থাকা ইলেক্ট্রোলাইট শরীরের নানা কাজের জন্য জরুরি।


পালং শাক (Spinach):

পালং শাকের মতো সবুজ শাক খুব প্রয়োজন শরীরের জন্য। এতে ভিটামিন এ, সি, কে, আয়রন ইত্যাদি থাকে, যা রক্ত গঠনে সাহায্য করে, চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে ও ইমিউনিটি শক্তিশালী করে। প্রতিদিন খাবারের সাথে পালং শাক রাখুন।


বাদাম ও বীজ (Nuts & Seeds) :

বাদাম, কালোজিরা এবং সূর্যমুখী বীজ, বেসন—এসব খাবার প্রোটিন ও ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে বিকাশে সাহায্য করে।


সহজ রান্নার টিপস

যদিও এসব খাবার খুব ভাল, কিন্তু এগুলো নিয়মিত না খেলে কিছু লাভ হয় না।

  • রান্নার সময় হলুদ, আদা, রসুনের ব্যবহার ঠিক রাখুন।
  • গরম গরম আদা চা অথবা হলুদ গরম দুধ পান করুন।
  • সবজি রান্না একদম বেশি তেল-চর্বি ছাড়া রাখুন।
  • তাজা, মৌসুমী খাবার বেশি খান।
  • গ্রীন টি ও নারকেল জল নিয়মিত পান করুন।

আরও পড়ুন: ৭টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ: ক্যান্সারের ঝুঁকি কাদের বেশি ও প্রাথমিক লক্ষণ কিভাবে বুঝবেন


FAQ (প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন)

১. ইমিউনিটি বাড়াতে কি দুধ-হলুদ খাওয়া কি আসলেই কার্যকর?

হ্যাঁ, হলুদে থাকা কুরকুমিন প্রদাহ কমায় আর দুধের ক্যালসিয়াম শরীরকে শক্তি দেয়। এটি প্রাচীন কাল থেকে ব্যবহৃত হয়।

২. আমলার জায়গায় আর কি খাওয়া উচিত?

আমলার সাথে লেবু, তরমুজ, কমলা জাতীয় ফলগুলোও ভিটামিন সি’র ভালো উৎস।

৩. রসুন বেশি খাওয়া কি ক্ষতিকর?

সাধারণ মাত্রায় খাওয়া নিরাপদ। তবে অতিরিক্ত খেলে গ্যাস বা অম্বল হতে পারে।

৪. গ্রীন টি কবে পানি থেকে বেশি উপকারি?

গ্রীন টি পরিশ্রুত পানি থেকে বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেয়। তবে খুব বেশি না খাওয়া ভালো।

৫. মধু কি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো?

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মধু অনেকটা নিয়ন্ত্রণে খাওয়া উচিত।

৬. নারকেল জল কি প্রতিদিন খাওয়া যায়?

হ্যাঁ, তবে পরিমাণ এক গ্লাস রাখা ভালো, বেশি না।

৭. বাদাম কতটুকু খাওয়া উচিত?

দিনে ৫-৭ বাদাম বা ১-২ চামচ বাদামজাত বীজ যথেষ্ট।


উপসংহার

আপনি যদি সত্যিই সুস্থ থাকতে চান, রোগ থেকে দূরে থাকতে চান, একটা ভালো জীবনযাপন নিশ্চিত করতে চান, তাহলে এই ভারতীয় খাবারগুলো নিয়মিত খান। প্রচলিত টোটকা না মেনে বরং বিজ্ঞানসম্মত, সুপারিশকৃত খাবার ও অভ্যাসগুলোকে নিজের দৈনন্দিন জীবনের অংশ করুন। আপনার শরীর নিজেই জানিয়ে দেবে, কতটা তাজা ও শক্তিশালী হচ্ছেন। তাজা সবজি, আদা, হলুদ আর মধু দিয়ে শুরু করুন, দেখুন কেমন জাদু হয়।

এইসব খাদ্য সহজে পাওয়া যায়, খরচও কম এবং স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ কার্যকর। তখন আর অসুস্থতার চিন্তা দরকার নেই! শুরু করুন আজ থেকেই, সুস্থ থাকুন সবসময়!



ডিসক্লেইমার: এখানে দেওয়া তথ্য পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসক গণের মতামত ও বিভিন্ন গবেষণার উপর ভিত্তি করে সাজানো হয়েছে। কোনো বড় স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে অবশ্যই সরাসরি ডাক্তার বা রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন।



Share This Post