সবুজ রঙের সাধারণ কিন্তু অনন্য পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি দেশি ফল হলো পেয়ারা। সহজলভ্য হওয়ায় অনেক সময় আমরা এ ফলকে অবহেলা করি। কিন্তু জানলে অবাক হতে হয়, প্রতিদিন মাত্র একটি পেয়ারা খাওয়াই শরীরকে দিতে পারে একাধিক অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো থেকে শুরু করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ডায়াবেটিস দমন, ক্যানসার প্রতিরোধ কিংবা ওজন কমানো— সব ক্ষেত্রেই পেয়ারা এক সেরা প্রাকৃতিক ওষুধ।
পেয়ারা কেন এত উপকারী?
পেয়ারা ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফাইবার, পটাশিয়াম, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম সহ বিভিন্ন খনিজে ভরপুর। আশ্চর্যের বিষয়, পেয়ারায় যে পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায়, তা কমলার থেকেও প্রায় চার গুণ বেশি! এর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং পলিফেনল ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি কমাতে কার্যকর।
আরও পড়ুন: ইমিউনিটি বাড়াতে নিয়মিত কোন খাবারগুলো খাবেন?
প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারাতে পুষ্টিমান
উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
ক্যালরি | ৬৮ কিলোক্যালরি |
আমিষ | ২.৫৫ গ্রাম |
শর্করা | ১৪.৩ গ্রাম |
ফাইবার | ৫.৪ গ্রাম |
চর্বি | ০.৯৫ গ্রাম |
কোলেস্টেরল | ০ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ | ৬২৪ IU |
ভিটামিন সি | ২২৮ মিগ্রা |
পটাশিয়াম | ৪১৭ মিগ্রা |
ক্যালসিয়াম | ১৮ মিগ্রা |
আয়রন | ০.২৬ মিগ্রা |
লাইকোপেন | ৫২০৪ মাইক্রোগ্রাম |
পেয়ারা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পেয়ারা
- পেয়ারা ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে।
- এর কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ ফল করে তুলেছে।
- পেয়ারা পাতা ফোটানো পানীয়ও ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে।
- পেয়ারা বীজ শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে।
২. ওজন কমাতে কার্যকর
- এতে ক্যালোরি কম, ফ্যাট প্রায় নেই।
- ফাইবারে ভরপুর হওয়ায় দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে।
- পাচন প্রক্রিয়া উন্নত করে অতিরিক্ত চর্বি জমতে দেয় না।
৩. ক্যানসার প্রতিরোধে পেয়ারা
- পেয়ারা ও এর বীজে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট (ভিটামিন সি, লাইকোপেন, কোয়ারসেটিন) প্রচুর থাকে।
- এগুলো ফ্রি-র্যাডিক্যাল নষ্ট করে ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
- প্রোস্টেট ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে বিশেষভাবে কার্যকর।
৪. হৃদরক্ষক ফল
- নিয়মিত পেয়ারা খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।
- ট্রাইগ্লিসারাইড ও ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (LDL) কমায়।
- হার্ট অ্যাটাক ও কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের ঝুঁকি হ্রাস করে।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- পেয়ারায় থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
- সাধারণ সর্দি-কাশি দূর করতে সাহায্য করে।
৬. চোখের সুরক্ষায় পেয়ারা
- ভিটামিন এ সমৃদ্ধ।
- কর্নিয়া সুস্থ রাখে।
- রাতকানা ও ছানি পড়ার ঝুঁকি কমায়।
৭. গর্ভবতী মায়ের জন্য উপকারী
- এতে থাকা ফোলিক অ্যাসিড ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্র গঠনে সহায়ক।
- জন্মগত ত্রুটি রোধে সাহায্য করে।
৮. ত্বক ও সৌন্দর্যের যত্নে
- অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ত্বকের বার্ধক্য দূর করে।
- ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয়।
- নিয়মিত খেলে ত্বক হয় উজ্জ্বল, চুল ও দাঁতের জ্যোতি বাড়ে।
৯. হজমশক্তি উন্নত করে
- পেয়ারা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
- পেয়ারা বীজে থাকা ফাইবার হজম শক্তি বাড়ায় ও অ্যাসিডিটি দূর করে।
১০. ঋতুস্রাবজনিত যন্ত্রণা কমায়
- পেয়ারাপাতার রস ঋতুস্রাবকালীন পেট, কোমর ও পায়ের ব্যথা কমাতে কার্যকর।
- গবেষণা বলছে, এটি ব্যথানাশক ওষুধের সমান কার্যকারী হিসেবে কাজ করতে পারে।
পেয়ারার বীজের বিশেষ উপকারিতা
- পাচন শক্তি বাড়ায়
- কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
- ওজন কমাতে সাহায্য করে
- অ্যাসিডিটি প্রতিরোধ করে
আরও পড়ুন:পাউরুটি খাওয়া: লাভ না ক্ষতি?
পেয়ারা খাওয়ার সেরা উপায়
- কাঁচা পেয়ারা – কাঁচা পেয়ারায় ভিটামিন এ প্রচুর থাকে, চোখের জন্য উপকারী।
- পেয়ারা ভর্তা – নুন-মরিচ দিয়ে সহজেই বানানো যায়।
- পেয়ারার জেলি বা জ্যাম – মিষ্টিপ্রেমীদের জন্য স্বাস্থ্যকর বিকল্প।
- রস ও স্মুদি – সুস্বাদু স্বাস্থ্যকর পানীয়।
- পেয়ারা পাতা ফোটানো জল – ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও ব্যথা কমাতে কার্যকর।
FAQ: পেয়ারা নিয়ে সাধারণ প্রশ্ন
প্রতিদিন কতটি পেয়ারা খাওয়া উচিত?
প্রতিদিন ১-২টি মাঝারি সাইজের পেয়ারা খেলে শরীর সুস্থ থাকবে।
ডায়াবেটিস রোগীরা কি পেয়ারা খেতে পারবেন?
অবশ্যই, তবে সীমিত পরিমাণে খেতে হবে।
পেয়ারা খেলে কি ওজন কমে?
হ্যাঁ,এটি পেট ভরা রাখে এবং ফ্যাট জমতে দেয় না।
গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়া নিরাপদ কি?
হ্যাঁ, পেয়ারা গর্ভাবস্থায় খাওয়া নিরাপদ ও উপকারী। তবে অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়।
পেয়ারার বীজ কি খাওয়া যায়?
হ্যাঁ, খাবেন অবশ্যই। এটি হজম, ওজন কমানো এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
উপসংহার
পেয়ারা সত্যিই এক অসাধারণ প্রাকৃতিক ওষুধ। সহজলভ্য এই ফল প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখলে ওজন কমানো, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ক্যানসার প্রতিরোধ, হার্টের যত্ন থেকে শুরু করে ত্বকের উজ্জ্বলতা—সবই মেলে একসাথে। তাই স্রেফ সস্তা ফল ভেবে উপেক্ষা না করে প্রতিদিন একটি পেয়ারা খাওয়া অভ্যাসে পরিণত করুন।