আজকাল প্রায় সব বাড়িতেই একটি অভিযোগ খুব সাধারণ—বাচ্চারা বারবার সর্দি-কাশি, জ্বর বা ভাইরাল সংক্রমণে ভুগছে। একটু আবহাওয়া বদলালেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অনেক বাবা–মা ভাবেন, “আমাদের সময় তো এমন হতো না, এখনকার বাচ্চারা এত দুর্বল কেন?”
আসলে সত্যিটা হলো—শিশুদের ইমিউন সিস্টেম বড়দের মতো শক্ত হয় না। তাদের শরীর এখনও শিখছে, কীভাবে জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করতে হয়। তাই ছোট থেকেই যদি প্রাকৃতিক খাবার, সঠিক পুষ্টি আর ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা যায়, তাহলে ধীরে ধীরে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক শক্ত হয়।
এই লেখায় আমরা সহজভাবে বুঝে নেব—কোন খাবার, কোন ভিটামিন আর কোন দৈনন্দিন অভ্যাস শিশুদের ইমিউনিটি বাড়াতে সত্যিই কাজে আসে।
শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় কোন ভিটামিন?
শিশুদের ইমিউনিটি ভালো রাখার জন্য কিছু ভিটামিন খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলো শরীরকে শুধু রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে না, বরং অসুস্থতা থেকে দ্রুত সেরে উঠতেও সাহায্য করে।
ভিটামিন C শিশুদের সর্দি-কাশি, জ্বর ও ভাইরাল সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। ভিটামিন D শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও শক্ত করে তোলে, বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে। ভিটামিন A চোখ, ত্বক ও শ্বাসনালিকে সুরক্ষা দেয়, যা সংক্রমণ ঠেকাতে খুব দরকারি। আর ভিটামিন B6 ও B12 শরীরের ইমিউন সেলগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
এই ভিটামিনগুলো যদি নিয়মিত খাবারের মাধ্যমেই পাওয়া যায়, তাহলে অনেক সময় আলাদা করে ওষুধ বা সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন পড়ে না।
ভিটামিন D খেলে কি বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে?
হ্যাঁ, ভিটামিন D শিশুদের ইমিউনিটি বাড়াতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বাচ্চাদের শরীরে ভিটামিন D-এর ঘাটতি থাকে, তারা তুলনামূলকভাবে বেশি অসুস্থ হয়।
ভিটামিন D পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো সকালের রোদে খেলাধুলা করা। প্রতিদিন ১৫–২০ মিনিট রোদে থাকলেই শরীর নিজে থেকেই ভিটামিন D তৈরি করতে পারে। এছাড়া ডিমের কুসুম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারেও কিছুটা ভিটামিন D থাকে। অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তার শিশুর বয়স অনুযায়ী ভিটামিন D ড্রপও দিতে পারেন।
যেসব বাচ্চা নিয়মিত রোদে খেলে ও বাইরে খেলাধুলা করে, তাদের ইমিউনিটি সাধারণত ভালো থাকে।
আরও পড়ুন: Boosting Children’s Immunity: শিশুদের ইমিউনিটি বাড়ায় যেসব ৫ টি ফল
শিশুদের ইমিউনিটির জন্য সেরা খাবার কোনগুলো? || Which food is best for kids’ immunity :
শিশুদের ইমিউনিটি বাড়াতে খুব দামি বা বিদেশি খাবারের দরকার নেই। আমাদের ঘরের সাধারণ খাবারই এই কাজটা সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পারে।
দুধ ও দই শিশুদের জন্য খুব উপকারী। দইয়ে থাকা ভালো ব্যাকটেরিয়া পেট ভালো রাখে, আর পেট ভালো থাকলেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভালো থাকে। ডিম হলো প্রোটিন, ভিটামিন D ও B12-এর দারুন উৎস, যা শিশুদের শরীর গঠন ও ইমিউন সিস্টেম শক্ত করতে সাহায্য করে।
ডাল ও সবজি দিয়ে তৈরি স্যুপ শরীরকে ভেতর থেকে শক্ত করে, বিশেষ করে অসুস্থতার পর। আর বাদাম বা কাজু অল্প পরিমাণে গুঁড়ো করে দুধে মিশিয়ে দিলে ছোট বাচ্চারাও সহজে খেতে পারে এবং ভালো পুষ্টি পায়।
কোন ফল খেলে শিশুদের ইমিউনিটি বাড়ে? || Which fruits make immunity strong :
ফল হলো শিশুদের ইমিউনিটি বাড়ানোর সবচেয়ে সহজ ও প্রাকৃতিক উপায়। নিয়মিত ফল খেলে শরীর প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পায়।
কমলা ভিটামিন C-এ ভরপুর, যা সর্দি-কাশি ও জ্বরের বিরুদ্ধে কাজ করে। পেয়ারায় কমলার থেকেও বেশি ভিটামিন C থাকে, তাই এটি শিশুদের জন্য খুবই উপকারী। কলা শক্তি দেয়, হজম ভালো করে এবং অসুস্থ বাচ্চাদের জন্য আদর্শ ফল। পেঁপে হজমে সাহায্য করে ও শরীর পরিষ্কার রাখে। আর আপেল নিয়মিত খেলে শরীর ভেতর থেকে শক্ত থাকে এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতা বাড়ে।
আরও পড়ুন: ১০টি ভিটামিন C-তে ভরপুর প্রাকৃতিক খাবার
দ্রুত বাচ্চার ইমিউনিটি বাড়াতে কী করবেন? || How can I boost my child’s immune system fast :
এখানে একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বোঝা দরকার—ইমিউনিটি কোনো ম্যাজিক নয় যে একদিনে বেড়ে যাবে। তবে কিছু অভ্যাস নিয়মিত মেনে চললে ধীরে ধীরে ইমিউনিটি শক্ত হয়।
শিশুকে পর্যাপ্ত ঘুম দিতে হবে, কারণ ঘুমের সময়ই শরীর নিজেকে ঠিক করে। প্রতিদিন বাইরে খেলাধুলা করতে দিতে হবে, যাতে শরীর সক্রিয় থাকে ও ভিটামিন D তৈরি হয়। ফল ও ঘরোয়া খাবার বাড়াতে হবে এবং চিপস, কোল্ড ড্রিঙ্ক, ফাস্ট ফুড যতটা সম্ভব কমাতে হবে। অসুস্থতার সময় জোর করে খাবার না খাইয়ে হালকা, সহজপাচ্য খাবার দেওয়াই ভালো।
শিশুদের ইমিউনিটি নিয়ে প্রায়শই জিজ্ঞাসা করা প্রশ্ন (FAQ)
শিশুরা কেন বারবার অসুস্থ হয়?
কারণ শিশুদের ইমিউন সিস্টেম এখনও পুরোপুরি তৈরি হয়নি। এটি ধীরে ধীরে শেখে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শক্ত হয়।
ইমিউনিটি বাড়াতে কি সাপ্লিমেন্ট দরকার?
সব সময় না। যদি শিশু সঠিক খাবার, ফল, দুধ ও ঘরোয়া খাবার খায়, তাহলে সাধারণত আলাদা সাপ্লিমেন্টের দরকার হয় না। প্রয়োজনে ডাক্তার পরামর্শ দেন।
অসুস্থ অবস্থায় ফল খাওয়ানো যাবে?
হ্যাঁ, অবশ্যই। কমলা, পেয়ারা, আপেল বা কলার মতো ফল এই সময়ে শরীরকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।
ফাস্ট ফুড কি ইমিউনিটি কমায়?
হ্যাঁ। অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, চিপস ও কোল্ড ড্রিঙ্ক শিশুদের ইমিউনিটি দুর্বল করে।
বাচ্চাদের জন্য দই কি প্রতিদিন দেওয়া যায়?
হ্যাঁ, দই প্রতিদিন অল্প পরিমাণে দেওয়া যায়। এটি পেট ভালো রাখে এবং ইমিউনিটি বাড়ায়।
রোদে খেলাধুলা কি সত্যিই দরকার?
খুবই দরকার। রোদ থেকে ভিটামিন D পাওয়া যায়, যা ইমিউন সিস্টেম শক্ত করতে সাহায্য করে।
ইমিউনিটি ভালো হতে কত সময় লাগে?
ইমিউনিটি ধীরে ধীরে তৈরি হয়। নিয়মিত সঠিক খাবার ও অভ্যাস থাকলে কয়েক মাসের মধ্যেই পার্থক্য বোঝা যায়।

