Bird flu

Bird Flu: কী, কীভাবে ছড়ায়, লক্ষণ, চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন

Share This Post

প্রতি বছর শীতকাল বা আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় বার্ড ফ্লু নিয়ে নতুন করে আতঙ্ক ছড়ায়। বিশেষ করে যেসব পরিবার মুরগি পালন করেন বা যাদের এলাকায় পোলট্রি খামার রয়েছে, তাদের মধ্যে ভয়টা বেশি কাজ করে। অনেকেই আবার ভাবেন—বার্ড ফ্লু মানেই কি মানুষের জন্য ভয়ংকর? মুরগি খাওয়া কি বন্ধ করতে হবে?

আসলে সঠিক তথ্য জানলে আতঙ্কের প্রয়োজন নেই। এই লেখায় আমরা খুব সহজভাবে বুঝে নেব—বার্ড ফ্লু কী, কেন হয়, মুরগির লক্ষণ কী, চিকিৎসা ও ভ্যাকসিনের নিয়ম, আর কীভাবে এটি ছড়ায়।


Bird flu: বার্ড ফ্লু কি?

বার্ড ফ্লু হলো এক ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ, যা মূলত পাখিদের আক্রান্ত করে। বিশেষ করে মুরগি, হাঁস, রাজহাঁস, কবুতর ইত্যাদি পাখির মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় Avian Influenza বলা হয়।

এই রোগটি সাধারণত পাখিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তবে কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে মানুষও আক্রান্ত হতে পারে, যদিও সেটি খুবই বিরল।


বার্ড ফ্লু ভাইরাসের নাম কি?

বার্ড ফ্লু রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসটির নাম হলো Influenza A virus
এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ও আলোচিত স্ট্রেন হলো—

  • H5N1
  • H5N8
  • H7N9

এর মধ্যে H5N1 ভাইরাসটি সবচেয়ে বেশি মারাত্মক বলে ধরা হয়, বিশেষ করে মুরগির ক্ষেত্রে।


Bird flu: মুরগির বার্ড ফ্লু রোগের লক্ষণ

মুরগির মধ্যে বার্ড ফ্লু (bird flu) হলে লক্ষণগুলো সাধারণত খুব দ্রুত দেখা যায় এবং অনেক সময় একসঙ্গে অনেক মুরগি মারা যায়। খামারিরা যদি আগেই লক্ষণগুলো চিনতে পারেন, তাহলে বড় ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।

মুরগির সাধারণ লক্ষণগুলো হলো—
হঠাৎ করে খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া, খুব দুর্বল হয়ে পড়া, ডিম দেওয়া হঠাৎ কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া, চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়া, ঝিমুনি ভাব, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, ঝুঁটি ও ঝোলার রঙ নীলচে বা কালচে হয়ে যাওয়া। অনেক ক্ষেত্রে হঠাৎ মৃত্যু ঘটে, কোনো বড় লক্ষণ না দেখিয়েই।


বার্ড ফ্লু কিভাবে ছড়ায়?

বার্ড ফ্লু খুব দ্রুত ছড়াতে পারে, বিশেষ করে যেখানে মুরগির সংখ্যা বেশি। এই ভাইরাস ছড়ানোর প্রধান উপায়গুলো হলো—

সংক্রমিত মুরগির লালা, মল বা নাকের স্রাবের মাধ্যমে। একই জায়গায় থাকা সুস্থ মুরগি খুব সহজেই আক্রান্ত হয়। দূষিত খাবার, পানি, খামারের জুতো, খাঁচা বা যন্ত্রপাতির মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়াতে পারে। বন্য পাখি, বিশেষ করে হাঁস অনেক সময় ভাইরাস বহন করে কিন্তু নিজেরা অসুস্থ না হয়ে অন্য পাখিকে সংক্রমিত করে।


আরও পড়ুন:পাকস্থলীর আলসার: সম্পূর্ণ নিরাময় বনাম পুনরাবৃত্তি—কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?


মুরগির বার্ড ফ্লু রোগের চিকিৎসা

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো—বার্ড ফ্লুর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই
এই রোগ হলে সাধারণত সংক্রমিত মুরগিকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয় না, কারণ এতে রোগ আরও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আক্রান্ত মুরগি ও আশেপাশের মুরগিকে নিধন (culling) করা হয় এবং এলাকা জীবাণুমুক্ত করা হয়। এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।

এই কারণে আগাম সতর্কতা ও ভ্যাকসিনই সবচেয়ে বড় সুরক্ষা।


বার্ড ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম

অনেক দেশেই নিয়ন্ত্রিতভাবে বার্ড ফ্লু ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়। তবে ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম দেশভেদে আলাদা হতে পারে এবং সাধারণত সরকারি পশু চিকিৎসকের পরামর্শেই এটি করা উচিত।

ভ্যাকসিন সাধারণত সুস্থ মুরগিকে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট বয়স অনুযায়ী ডোজ নির্ধারণ করা থাকে এবং অনেক সময় বুস্টার ডোজও দরকার হয়। খামার পর্যায়ে নিজের ইচ্ছেমতো ভ্যাকসিন দেওয়া ঠিক নয়—সবসময় ভেটেরিনারি ডাক্তারের নির্দেশ মানতে হবে।


মুরগির ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম

মুরগির ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন সাধারণত ইনজেকশন বা পানির মাধ্যমে দেওয়া হয়, তবে এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে কোন ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর।

ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে নিশ্চিত করতে হয় যে মুরগি সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। অসুস্থ বা দুর্বল মুরগিকে ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত নয়। ভ্যাকসিনের পর কিছুদিন মুরগিকে পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার।


মানুষের মধ্যে বার্ড ফ্লু কতটা বিপজ্জনক?

মানুষের মধ্যে বার্ড ফ্লু খুবই বিরল। সাধারণত সংক্রমিত মুরগির খুব কাছাকাছি সংস্পর্শে এলে ঝুঁকি থাকে। ভালোভাবে রান্না করা মুরগির মাংস বা ডিম খেলে বার্ড ফ্লু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

তবে মৃত বা অসুস্থ মুরগি হাত দিয়ে ধরার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।


সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের নাম কি?

সোয়াইন ফ্লু এবং বার্ড ফ্লু এক নয়।
সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের নাম হলো Influenza A (H1N1)। এটি মূলত শূকর থেকে ছড়ালেও মানুষে মানুষে সংক্রমিত হতে পারে। অনেকেই এই দুটি ফ্লুকে গুলিয়ে ফেলেন, কিন্তু এরা আলাদা ভাইরাস ও আলাদা রোগ।


আরও পড়ুন:ডেঙ্গু জ্বরে কি অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে? ডাক্তাররা কেন প্যারাসিটামল ও স্যালাইনের ওপর জোর দেন?


বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে কী করবেন?

মুরগির খামার পরিষ্কার রাখা খুব জরুরি। বাইরের পাখির সঙ্গে মুরগির সংস্পর্শ কমাতে হবে। খামারে ঢোকার সময় জুতো ও হাত পরিষ্কার করতে হবে। নতুন মুরগি আনার আগে কিছুদিন আলাদা করে রাখলে ঝুঁকি কমে। সন্দেহজনক লক্ষণ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পশু চিকিৎসক বা প্রশাসনকে জানানো উচিত।


বার্ড ফ্লু নিয়ে প্রায়শই জিজ্ঞাসা করা প্রশ্ন (FAQ)

বার্ড ফ্লু কি মানুষে ছড়ায়?

খুব বিরল ক্ষেত্রে ছড়াতে পারে, তাও সরাসরি সংক্রমিত পাখির সংস্পর্শে এলে।

বার্ড ফ্লু হলে মুরগির মাংস খাওয়া যাবে?

আক্রান্ত এলাকার মুরগি এড়িয়ে চলা উচিত। তবে ভালোভাবে রান্না করা মুরগির মাংস সাধারণত নিরাপদ।

বার্ড ফ্লু কি প্রতিরোধযোগ্য?

হ্যাঁ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিয়ন্ত্রণ ও ভ্যাকসিনের মাধ্যমে ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়।

ভ্যাকসিন দিলেই কি বার্ড ফ্লু হবে না?

ভ্যাকসিন ঝুঁকি কমায়, তবে শতভাগ নিশ্চয়তা দেয় না। অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থাও জরুরি।


আরও পড়ুন:চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়: ২ দিনেই দাদকে বলুন টাটা



Share This Post