শিশুদের শরীর আকারে ছোট হলেও তাদের শক্তির চাহিদা কিন্তু কম নয়। প্রতিদিন খেলাধুলো করা, স্কুলে মন দিয়ে পড়াশোনা করা আর সুস্থভাবে বড় হয়ে ওঠার জন্য ভালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি থাকা খুবই জরুরি। কিন্তু সমস্যা হলো—শিশুদের ইমিউন সিস্টেম এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি। তাই তারা বড়দের তুলনায় সহজেই সর্দি, কাশি, জ্বর বা ভাইরাল ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়।
এই অবস্থায় বাবা–মায়েদের মনে সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্ন আসে—“ইমিউনিটি বাড়াতে কী করবো?”
এর উত্তর খুব জটিল নয়। নিয়মিত সঠিক ফল খাওয়ানোই ইমিউনিটি শক্ত করার সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ উপায়।
চলুন, এমন ৫টি ফলের কথা জেনে নিই, যেগুলো শিশুদের ইমিউনিটি বাড়াতে সত্যিই কাজে আসে।
কমলা :

ORANGE
কমলার নাম শুনলেই প্রথমে যে জিনিসটা মনে আসে, তা হলো ভিটামিন C। এই ভিটামিন শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত কমলা খেলে ঠান্ডা লাগা, কাশি বা ভাইরাল জ্বরের ঝুঁকি অনেকটাই কমে।
স্কুলে যাওয়ার আগে একটি কমলা বা বিকেলে এক গ্লাস ঘরে তৈরি কমলার জল দিলে ভালো হয়। কমলার স্বাদ মিষ্টি-টক হওয়ায় বেশিরভাগ বাচ্চাই এটি খেতে পছন্দ করে, আলাদা করে জোর করতে হয় না।
পেয়ারা :

GUAVA
পেয়ারা আমাদের দেশের খুব পরিচিত এবং সহজলভ্য একটি ফল। অনেকেই জানেন না যে একটি পেয়ারায় কমলার থেকেও বেশি ভিটামিন C থাকে। তাই ইমিউনিটি বাড়ানোর দিক থেকে পেয়ারা সত্যিই অসাধারণ।
পেয়ারা শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় না, হজমও ভালো রাখে। যেসব বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটের সমস্যা থাকে, তাদের জন্য পেয়ারা বিশেষ উপকারী। ছোট ছোট টুকরো করে বা হালকা নুন-লেবু ছিটিয়ে দিলে বাচ্চারা খুব আনন্দের সঙ্গে খায়।
আরও পড়ুন: Tooth Decay in Children | শিশুদের দাঁতের ক্ষয়: কারণ, লক্ষণ, ও প্রতিরোধের সহজ উপায়!
পেঁপে :

Papaya
পেঁপে এমন একটি ফল, যা একসঙ্গে অনেক উপকার করে। এতে ভিটামিন C এবং ভিটামিন A—দুটোই থাকে, যা শিশুদের ইমিউন সিস্টেম শক্ত করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি পেঁপে হজমে সাহায্য করে এবং শরীরের ভেতর পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
যেসব বাচ্চাদের গ্যাস, পেট ভার বা খাবার হজমে সমস্যা হয়, তাদের জন্য অল্প পরিমাণ পেঁপে খুব ভালো কাজ করে। সকালে বা দুপুরে খাওয়ালে সবচেয়ে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: Causes Of Tooth Decay : দাঁতের ক্ষয়ের প্রাথমিক লক্ষণগুলো কী?
কলা :

Banana
কলা খুব সহজে হজম হয় এবং শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায়। তাই জ্বর বা অসুস্থতার পর শিশুদের জন্য কলা একটি আদর্শ ফল। এতে থাকা ভিটামিন B6 শরীরের ইমিউন সিস্টেম ঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
যেসব বাচ্চারা দুর্বল, খাবারে অনীহা দেখায় বা বারবার ক্লান্ত হয়ে পড়ে—তাদের খাদ্যতালিকায় কলা রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: প্রতিদিন দাঁতের যত্ন নেওয়ার সঠিক উপায় | Proper Daily Oral Care Routine
আপেল :

Apple
“দিনে একটা আপেল, ডাক্তারের দরকার নেই”—এই কথাটার পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে। আপেলে থাকে ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শিশুদের শরীরকে ভেতর থেকে শক্ত রাখে এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়ায়।
ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আপেলের খোসা ছাড়িয়ে ছোট টুকরো করে দেওয়া ভালো। চাইলে সামান্য সেদ্ধ করেও দেওয়া যায়, যাতে হজম আরও সহজ হয়।
আরও পড়ুন: দাঁতের ব্যথায় কী করবেন? ঘরোয়া প্রতিকার
প্রায়শই জিজ্ঞাসা করা প্রশ্ন (FAQ)
শিশুদের ইমিউনিটি বাড়াতে ফল কতটা জরুরি?
ফল প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, যা ইমিউন সিস্টেম গঠনের জন্য খুবই জরুরি। নিয়মিত ফল খেলে শিশুদের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি কমে।
এক দিনে কতটা ফল দেওয়া উচিত?
শিশুর বয়স অনুযায়ী দিনে ১–২ বাটি ফল যথেষ্ট। সব ফল একসঙ্গে না দিয়ে ভাগ করে দিলে ভালো।
জ্বর বা সর্দি হলে ফল খাওয়ানো যাবে?
হ্যাঁ, অবশ্যই। কমলা, পেয়ারা বা আপেলের মতো ফল এই সময়ে শরীরকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।
ফলের রস নাকি পুরো ফল—কোনটা ভালো?
পুরো ফল খাওয়ানোই ভালো, কারণ এতে ফাইবার থাকে। মাঝে মাঝে তাজা ফলের রস দেওয়া যেতে পারে, তবে প্যাকেটের জুস এড়িয়ে চলা উচিত।
ছোট বাচ্চাদের জন্য কোন ফল সবচেয়ে নিরাপদ?
কলা, আপেল (সেদ্ধ করা), পেঁপে এবং নরম পেয়ারা ছোট বাচ্চাদের জন্য নিরাপদ ও উপকারী।
ফল খেলে কি শিশুর ওজন বাড়ে?
স্বাভাবিক পরিমাণে ফল খেলে ওজন অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে না। বরং এটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
শুধু ফল খাওয়ালেই কি ইমিউনিটি ভালো হবে?
ফল খুব গুরুত্বপূর্ণ, তবে এর সঙ্গে সুষম খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম ও নিয়মিত খেলাধুলাও দরকার।

