beatroot

দেহে রক্ত বাড়ায় লাল বিট: ডায়াবেটিস, ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

Share This Post

আধুনিক ব্যস্ত জীবনে শরীরের যত্ন নেওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। দূষণ, অনিয়মিত জীবনযাপন আর অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আমাদের শরীরকে প্রতিদিন দুর্বল করে তুলছে। কিন্তু প্রকৃতির দেওয়া কিছু ভেষজ ও উপকারী খাবার আছে, যেগুলি নিয়মিত খেলে শরীর থাকবে সুস্থ এবং বহু রোগকেও ঘাড় ধরেই আটকে দেওয়া যাবে। এমনই এক আশ্চর্য খাবার হলো লাল বিটরুট (Red Beetroot)

প্রাচীন গ্রিক ও রোমানদের আমল থেকেই বিটরুট খাওয়ার প্রচলন ছিল। তারা নিয়ম করে বিট খেতেন নানা রোগ প্রতিরোধে। আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, সোডিয়াম, ভিটামিন ও ফোলিক অ্যাসিডে ভরপুর বিটরুট সত্যিকারের এক “ন্যাচারাল ব্লাড বিল্ডার”।

এই প্রবন্ধে আমরা বিস্তারিত জানব—বিটরুটের পুষ্টিগুণ, রক্ত বাড়ানোয় এর ভূমিকা, ডায়াবেটিস ও ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে এর কার্যকারিতা এবং আরও নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা।


Table of Contents

লাল বিটরুটে কী কী পুষ্টি আছে?

পুষ্টি উপাদানস্বাস্থ্য উপকারিতা
আয়রনরক্ত তৈরি করে, রক্তশূন্যতা দূর করে
ফোলেট ও ফলিক অ্যাসিডজন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ, কোষ তৈরি
ভিটামিন সিরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
পটাশিয়ামরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
ফাইবারকোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হজমে সাহায্য করে
নাইট্রেটরক্তসঞ্চালন স্বাভাবিক করে, মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছায়
ম্যাঙ্গানিজহাড় ও মেটাবলিজম শক্তিশালী করে
বিটানিন (পিগমেন্ট)শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, ক্যানসার প্রতিরোধী

লাল বিটের স্বাস্থ্য উপকারিতা

১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

  • বিটের মধ্যে থাকা আলফা লাইপোইক অ্যাসিড রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করে।
  • ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীরা উপকৃত হন।
  • গ্লুকোজ মেটাবলিজম ঠিক রাখে এবং শরীরকে স্ট্রেস-ভিত্তিক ডায়াবেটিসের ওঠা-নামা থেকে রক্ষা করে।

২. ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর

  • বিটের মূল উপাদান বিটানিন এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট।
  • এটি ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে।
  • গবেষণায় দেখা গেছে, বিটের অ্যান্টি-টিউমার গুণ নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে রক্ষা করে।

৩. রক্তাল্পতা দূর করে রক্ত বাড়ায়

  • বিট আয়রনের সমৃদ্ধ উৎস।
  • রক্তশূন্যতায় ভোগা বা বিশেষ করে মহিলাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
  • দেহে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে শরীরকে শক্তি জোগায়।
  • যাদের অনিয়মিত মাসিক হয়, তাদের ক্ষেত্রেও বিট কার্যকর।

আরও পড়ুন: ইমিউনিটি বাড়াতে নিয়মিত কোন খাবারগুলো খাবেন?

৪. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

  • বিটের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক নাইট্রেটস রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন করে, যা রক্তনালিকে প্রসারিত করে।
  • স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।

৫. লিভার ডিটক্সিফাই করে

  • বিটরুটে আছে বেটাইন, যা লিভার পরিষ্কার রাখে।
  • লিভার থেকে জমে থাকা টক্সিন বের করে দেয়।
  • ফাস্ট ফুড খাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও লিভারকে রক্ষা করে।

৬. কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে

  • বিটরুটে প্রচুর ফাইবার আছে।
  • হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • অন্ত্র পরিষ্কার রাখে এবং মেটাবলিজম ভালো রাখে।

৭. ওজন কমাতে সাহায্য করে

  • ক্যালোরি অত্যন্ত কম এবং ফ্যাট প্রায় নেই বললেই চলে।
  • শরীরে বাড়তি চর্বি জমতে বাধা দেয়।
  • দ্রুত এনার্জি সরবরাহ করে তাই ডায়েটিংয়ে থাকা লোকজনের জন্য উপকারী।

৮. পেশিশক্তি বাড়ায়

  • জিম করা মানুষদের জন্য বিট জুস অসাধারণ।
  • মাংসপেশি শক্তিশালী করে এবং ব্যায়ামের সহ্যক্ষমতা বাড়ায়।
  • ক্লান্তি দূর করে দেহকে সতেজ রাখে।

৯. ডিপ্রেশন কমায়

  • বিট জুসে থাকা ট্রিপ্টোফান ও বেটাইন মন ভালো করতে সাহায্য করে।
  • স্ট্রেস কমায়, ডিপ্রেশন দূর করে।

১০. রক্ত পরিষ্কার ও সঞ্চালন উন্নত করে

  • শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয়।
  • লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়ায়।
  • মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।

১১. জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে

  • বিট ফোলেট ও ফলিক অ্যাসিডের প্রাকৃতিক উৎস।
  • গর্ভবতী নারীদের নিয়মিত বিট খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

১২. ত্বক উজ্জ্বল ও টানটান রাখে

  • বিটে রয়েছে অ্যান্টি-এজিং উপাদান।
  • নিয়মিত বিট খেলে ত্বকে বলিরেখা কমে যায়।
  • ত্বক উজ্জ্বল ও সতেজ হয়।

বিট খাওয়ার সহজ উপায়

  • বিটের জুস: সকালে এক গ্লাস জুস স্বাস্থ্য রক্ষার সেরা উপায়।
  • সালাদ: কাঁচা কুচি করে সালাদের সঙ্গে খাওয়া যায়।
  • স্মুদি: ফলের সঙ্গে মিশিয়ে হেলদি স্মুদি বানানো যায়।
  • বিট পারোটা/রুটি: আটার সঙ্গে মিশিয়ে পরোটা বা রুটি বানানো যায়।
  • সবজি তরকারি: গাজর, আলু কিংবা মটরের সঙ্গে মিলিয়েও রান্না করা যায়।

আরও পড়ুন: পাউরুটি খাওয়া: লাভ না ক্ষতি?


লাল বিট নিয়ে সাধারণ প্রশ্ন

বিট খেলে প্রসাব লাল হয় কেন?

বিটে থাকা বিটানিন নামক পিগমেন্টের কারণে প্রসাব বা মলের রঙ লালচে হতে পারে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

প্রতিদিন কতটুকু বিট খাওয়া নিরাপদ?

প্রতিদিন মাঝারি সাইজের ১টি বিট বা আধা গ্লাস জুস যথেষ্ট।

ডায়াবেটিস রোগীরা কি বিট খেতে পারবেন?

হ্যাঁ, তবে সীমিত পরিমাণে খেতে হবে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কি উপকারী?

হ্যাঁ, কারণ এতে ফোলিক অ্যাসিড আছে, যা শিশুর মস্তিষ্ক ও শারীরিক বিকাশে সহায়তা করে।

বিট কি ওজন কমাতে সাহায্য করে?

হ্যাঁ, ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকায় এটি ওজন কমাতে দারুণ সহায়ক।


উপসংহার

লাল বিট হলো এক অসাধারণ ভেষজ সবজি। আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর এই সবজি দেহে রক্ত বাড়ায়, ক্যানসার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে, লিভার ও হজমশক্তি ভালো রাখে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিট রাখুন আর জীবনের শক্তি ও প্রাণশক্তি ধরে রাখুন।



Share This Post