Kidney failure symptoms in elderly woman

কিডনি ফেইলিউরের ৫টি লক্ষণ: শুরুতেই চিনতে না পারলে বিপদ!

Share This Post

কিডনি আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্ত ​​থেকে বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করে, তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং হরমোন তৈরি করে। কিডনি রোগ প্রায়শই নীরবে শুরু হয় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে এর লক্ষণগুলি এতটাই subtle থাকে যে অনেকেই তা উপেক্ষা করেন। যখন লক্ষণগুলি স্পষ্ট হয়, তখন রোগটি অনেক advanced পর্যায়ে চলে যেতে পারে। তাই, কিডনি ফেইলিউরের প্রাথমিক লক্ষণগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। এখানে এমন ৫টি প্রাথমিক লক্ষণ আলোচনা করা হলো যা অনেকেই গুরুত্ব দেন না।

কিডনি ফেইলিউরের ৫টি প্রাথমিক লক্ষণ:

১. প্রস্রাবের অভ্যাসে পরিবর্তন

কিডনির প্রধান কাজ হলো প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত তরল বের করে দেওয়া। কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে প্রস্রাবের অভ্যাসে পরিবর্তন আসতে পারে।

•ঘন ঘন প্রস্রাব: বিশেষ করে রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া (নকচুরিয়া) কিডনি সমস্যার একটি প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। সুস্থ কিডনি সাধারণত রাতে কম প্রস্রাব তৈরি করে।

•প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া: কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে প্রস্রাবের পরিমাণ হঠাৎ করে কমে যেতে পারে বা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে।

•ফেনিল বা বুদবুদযুক্ত প্রস্রাব: প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফেনা বা বুদবুদ দেখা গেলে তা প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি নির্দেশ করে, যা কিডনি ক্ষতির একটি লক্ষণ।

•প্রস্রাবে রক্ত: প্রস্রাবে রক্ত দেখা গেলে তা কিডনি রোগের একটি গুরুতর লক্ষণ, যা অবিলম্বে চিকিৎসার প্রয়োজন।

আরো পড়ুন : গাজরের স্বাস্থ্য উপকারিতা: কেন আপনার প্রতিদিন গাজর খাওয়া উচিত?

২. ক্লান্তি এবং দুর্বলতা

কিডনি যখন সঠিকভাবে কাজ করে না, তখন রক্তে টক্সিন এবং বর্জ্য পদার্থ জমা হতে শুরু করে। এর ফলে:

•অতিরিক্ত ক্লান্তি: শরীর দুর্বল এবং ক্লান্ত অনুভব করে, এমনকি পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরেও।

•দুর্বলতা: দৈনন্দিন কাজকর্মেও শক্তি না পাওয়া।

•মনোযোগের অভাব: মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা হওয়া এবং বিভ্রান্তি অনুভব করা।

কিডনি erythropoietin নামক একটি হরমোন তৈরি করে, যা লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে। কিডনি ফেইলিউরের কারণে এই হরমোনের উৎপাদন কমে যায়, যার ফলে রক্তশূন্যতা (anemia) দেখা দিতে পারে এবং ক্লান্তি ও দুর্বলতা আরও বাড়িয়ে তোলে।

৩. ত্বক শুষ্ক এবং চুলকানিযুক্ত হওয়া

সুস্থ কিডনি রক্ত ​​থেকে অতিরিক্ত তরল এবং বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করে। যখন কিডনি ব্যর্থ হয়, তখন এই বর্জ্য পদার্থগুলি রক্তে জমা হয়, যা ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে:

•শুষ্ক ত্বক: ত্বক অস্বাভাবিকভাবে শুষ্ক হয়ে যায়।

•তীব্র চুলকানি: শরীরে অসহ্য চুলকানি হতে পারে, যা কোনো মলম বা লোশন দিয়েও কমে না।

•ত্বকের বিবর্ণতা: ত্বক ফ্যাকাশে বা ধূসর বর্ণের হতে পারে।

৪. পা, গোড়ালি এবং মুখ ফুলে যাওয়া

কিডনি শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম এবং তরল অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিডনি ফেইলিউরের কারণে এই তরলগুলি শরীর থেকে বের হতে পারে না এবং টিস্যুতে জমা হয়, যার ফলে:

•ফোলাভাব (Edema): বিশেষ করে পা, গোড়ালি, হাত এবং মুখে ফোলাভাব দেখা যায়।

•চোখের চারপাশে ফোলা: সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের চারপাশে ফোলাভাব দেখা যেতে পারে।

এই ফোলাভাবকে অনেকেই সাধারণ ক্লান্তি বা অন্য কোনো কারণে সৃষ্ট বলে উপেক্ষা করেন, যা কিডনি রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।

৫. পেশী ক্র্যাম্প এবং ব্যথা

কিডনি শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাশিয়াম। কিডনি ফেইলিউরের কারণে এই খনিজগুলির ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা পেশী ক্র্যাম্প এবং ব্যথার কারণ হতে পারে:

•পেশী ক্র্যাম্প: বিশেষ করে রাতে পা এবং অন্যান্য পেশীতে তীব্র ক্র্যাম্প বা টান অনুভব করা।

•পেশী দুর্বলতা: পেশী দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং সহজে ব্যথা অনুভব করা।

•হাড়ের দুর্বলতা: দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ হাড়কে দুর্বল করে দিতে পারে, যা ব্যথা এবং ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বাড়ায়।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

যদি আপনি উপরের লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন, বিশেষ করে যদি তা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা একাধিক লক্ষণ একসাথে দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা কিডনি রোগের progression ধীর করতে এবং গুরুতর জটিলতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।

সতর্কতা ও প্রতিরোধ:

  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো
  • উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • পর্যাপ্ত পানি পান করা (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)
  • অপ্রয়োজনীয় ওষুধ না খাওয়া
  • খাদ্যাভ্যাসে কম লবণ ও প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখা
আরো পড়ুন : পাউরুটি (ব্রেড) খাওয়া উচিত কি না?

উপসংহার

কিডনি ফেইলিউরের প্রাথমিক লক্ষণগুলি প্রায়শই সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার মতো মনে হতে পারে, তাই অনেকেই এগুলিকে উপেক্ষা করেন। কিন্তু এই লক্ষণগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সময় মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আপনার কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষা এবং দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা এড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার শরীরের পরিবর্তনগুলির প্রতি মনোযোগ দিন এবং কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে দ্রুত পদক্ষেপ নিন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

১. কিডনি ফেইলিউরের প্রাথমিক লক্ষণগুলি কেন প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়?
> কিডনি ফেইলিউরের প্রাথমিক লক্ষণগুলি প্রায়শই সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যার মতো মনে হতে পারে, যেমন ক্লান্তি বা প্রস্রাবের অভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন, তাই অনেকেই এগুলিকে গুরুত্ব দেন না।

২. প্রস্রাবের অভ্যাসে কী ধরনের পরিবর্তন কিডনি সমস্যার ইঙ্গিত দেয়?
> ঘন ঘন প্রস্রাব (বিশেষ করে রাতে), প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া, ফেনিল বা বুদবুদযুক্ত প্রস্রাব, এবং প্রস্রাবে রক্ত দেখা যাওয়া কিডনি সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।

৩. কিডনি ফেইলিউরের কারণে ক্লান্তি কেন হয়?
> কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে রক্তে টক্সিন এবং বর্জ্য পদার্থ জমা হয়, যা শরীরকে ক্লান্ত ও দুর্বল করে তোলে। এছাড়াও, কিডনি erythropoietin হরমোন তৈরি করে যা লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে; এর অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে, যা ক্লান্তি বাড়ায়।

৪. ত্বকের শুষ্কতা এবং চুলকানি কি কিডনি সমস্যার লক্ষণ?
> হ্যাঁ, কিডনি ব্যর্থ হলে বর্জ্য পদার্থ রক্তে জমা হয়, যা ত্বককে শুষ্ক, চুলকানিযুক্ত এবং বিবর্ণ করে তুলতে পারে।

৫. পা, গোড়ালি এবং মুখ ফুলে যাওয়া কেন কিডনি ফেইলিউরের লক্ষণ?
> কিডনি শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম এবং তরল অপসারণ করতে না পারলে এই তরলগুলি টিস্যুতে জমা হয়, যার ফলে পা, গোড়ালি, হাত এবং মুখে ফোলাভাব দেখা যায়।

৬. পেশী ক্র্যাম্প এবং ব্যথা কি কিডনি সমস্যার সাথে সম্পর্কিত?
> হ্যাঁ, কিডনি শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য (যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস) বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই ভারসাম্য নষ্ট হলে পেশী ক্র্যাম্প, দুর্বলতা এবং ব্যথা হতে পারে।

৭. কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
> যদি আপনি উপরের লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন, বিশেষ করে যদি তা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা একাধিক লক্ষণ একসাথে দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


Share This Post