rubbing plumb after yoga

Yoga: যোগা শেষে হাত ঘষা হয় কেন?

Share This Post

যোগা হলো এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে শরীর, মন আর আত্মা মিলেমিশে যায়। অনেকেই যোগকে শুধুই শরীরচর্চা মনে করেন, কিন্তু আসলে যোগা মানে হলো সম্পূর্ণ ভারসাম্য তৈরি করা। যোগ বা ধ্যান করার সময় শরীর শান্ত হয়, মন প্রশান্ত হয় এবং শ্বাসপ্রশ্বাস ধীর হয়। এই সময় আমাদের ভেতরে একধরনের স্থিরতা তৈরি হয়, যা সাধারণ সময়ে খুব একটা পাওয়া যায় না।

তবে যোগ শেষ হওয়ার পর আমরা একটা বিশেষ অভ্যাস লক্ষ্য করি—মানুষ প্রায়ই দুই হাত একসাথে ঘষে নেয়। দেখতে সাধারণ মনে হলেও এর মধ্যে রয়েছে বৈজ্ঞানিক ও আধ্যাত্মিক দুই ধরনের কারণ। আসুন সহজ ভাষায় বিস্তারিতভাবে জেনে নিই কেন আসলে হাত ঘষা হয় এবং এটি কীভাবে আমাদের উপকারে আসে।


শরীরে শক্তি ফিরিয়ে আনা

যোগা করার সময় আমাদের শরীর গভীরভাবে শিথিল অবস্থায় থাকে। হৃদস্পন্দন কমে যায়, রক্তচাপ স্থিতিশীল হয় এবং শরীর বিশ্রামের এক পর্যায়ে প্রবেশ করে। এই অবস্থায় শরীর যেন বাইরের জগত থেকে আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু যোগ শেষ হলে আমাদের আবার সেই দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততায় ফিরে যেতে হয়।

এখানেই হাত ঘষার গুরুত্ব সামনে আসে। হাত ঘষলে তালুর মধ্যে ঘর্ষণের কারণে তাপ তৈরি হয়। এই তাপ শরীরে একধরনের শক্তি সঞ্চার করে, যা শরীরকে ধীরে ধীরে আবার সক্রিয় করে তোলে। সহজভাবে বললে, হাত ঘষা শরীরকে “বিশ্রাম” থেকে “সক্রিয়তা”-র দিকে ফিরিয়ে আনে।


রক্ত সঞ্চালন বাড়ানো

আমাদের হাতের তালুতে অসংখ্য স্নায়ুপ্রান্ত রয়েছে। এই স্নায়ুগুলো সরাসরি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত। যখন আমরা হাত ঘষি, তখন সেই স্নায়ুগুলো উদ্দীপ্ত হয় এবং শরীরে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়।

রক্ত সঞ্চালন বাড়লে শরীরে অক্সিজেন ও পুষ্টি আরও ভালোভাবে পৌঁছায়। এতে করে শরীর দ্রুত পুনর্জীবিত হয়। যোগের পরে যখন শরীর কিছুটা নিস্তেজ থাকে, তখন হাত ঘষে রক্ত চলাচল বাড়ানো শরীরকে সতেজ করার সহজ উপায় হয়ে দাঁড়ায়।


মনোযোগ ফেরানো

যোগ বা ধ্যানের সময় মনকে বাইরের জগত থেকে সরিয়ে ভেতরের দিকে নেওয়া হয়। এতে মন এক ধরনের শূন্যতায় বা গভীর শান্ত অবস্থায় থাকে। এই অবস্থা থেকে হঠাৎ দৈনন্দিন জীবনে ফেরা অনেক সময় কঠিন মনে হয়। তাই মনোযোগ ফেরাতে হাত ঘষা একটি কার্যকর পদ্ধতি।

হাত ঘষে যখন আমরা উষ্ণ তালু চোখ বা মুখের ওপর রাখি, তখন মস্তিষ্কে একধরনের সংকেত যায়। এতে মন দ্রুত বর্তমান মুহূর্তে ফিরে আসে। সহজভাবে বললে, হাত ঘষা হলো এক ধরনের “গ্রাউন্ডিং টেকনিক”, যা আমাদের ধ্যান থেকে বাস্তব জীবনে মসৃণভাবে ফিরিয়ে আনে।

Read More: Yoga for weight Loss: যোগব্যায়াম দিয়ে ওজন কমান


আধ্যাত্মিক দিক

শুধু বিজ্ঞান নয়, যোগশাস্ত্রও হাত ঘষার গুরুত্বের কথা বলে। যোগবিদ্যার মতে, আমাদের শরীরে প্রবাহিত হয় প্রাণশক্তি বা “প্রাণা”। শরীরের বিভিন্ন স্থানে এই প্রাণশক্তির কেন্দ্র রয়েছে, যাদের বলা হয় “চক্র”। হাতের তালুতে বিশেষ এনার্জি পয়েন্ট থাকে, যা পুরো শরীরের সঙ্গে সংযুক্ত।

যখন আমরা হাত ঘষি, তখন এই এনার্জি পয়েন্টগুলো সক্রিয় হয়। আর সেই উষ্ণতা চোখ বা মাথায় ছুঁইয়ে দিলে মনে হয় যেন ভেতরের প্রাণশক্তি আবার জেগে উঠছে। অনেক গুরু-শিক্ষক বলেন, এটি হলো ভেতরের শান্তি বাইরের জীবনে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতীক।


বৈজ্ঞানিক কারণ

১. স্নায়ুতন্ত্র সক্রিয় হয় – হাত ঘষলে হাতের তালুর স্নায়ুগুলো উত্তেজিত হয়। এতে মস্তিষ্কে নতুন সিগন্যাল যায়, যা শরীরকে দ্রুত সক্রিয় করে।

২. তাপ তৈরি হয় – হাত ঘষার সময় ঘর্ষণের কারণে তাপ তৈরি হয়। এই তাপ শুধু হাতেই নয়, স্নায়ুর মাধ্যমে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে যোগ শেষে যখন শরীর ঠাণ্ডা লাগে, তখন এই উষ্ণতা খুব কার্যকর।

৩. ভালো লাগার হরমোন নিঃসৃত হয় – কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, হাত ঘষলে মস্তিষ্ক থেকে এন্ডোরফিন নিঃসৃত হয়। এন্ডোরফিনকে বলা হয় “ফিল-গুড হরমোন”, যা আমাদের মানসিক চাপ কমায় এবং মনের প্রশান্তি বাড়ায়।


যোগ শেষে হাত ঘষার সঠিক ধাপ

১. যোগ বা ধ্যান শেষ করার পর শান্তভাবে বসে থাকুন।
২. দু’হাত একসাথে প্রায় ১০-১৫ সেকেন্ড ভালোভাবে ঘষুন।
৩. হাত গরম হয়ে গেলে চোখ বন্ধ করে হাতের তালু চোখ বা মুখের ওপর রাখুন।
৪. কয়েক সেকেন্ড সেই উষ্ণতা অনুভব করুন।
৫. ধীরে ধীরে চোখ খুলুন এবং বাইরের জগতে ফিরে আসুন।


দৈনন্দিন জীবনে হাত ঘষার ব্যবহার

হাত ঘষা শুধু যোগ শেষে নয়, জীবনের নানা সময়েই কাজে আসে।

  • দীর্ঘ সময় কম্পিউটারে কাজ করলে চোখ ক্লান্ত হয়ে যায়। তখন হাত ঘষে চোখের ওপর রাখলে চাপ কমে যায়।
  • পরীক্ষার আগে বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় মনোযোগ ফেরাতে হাত ঘষা সহায়ক।
  • শীতকালে হাত ঠাণ্ডা হলে প্রাকৃতিকভাবে গরম করার উপায় হিসেবে হাত ঘষা ব্যবহার করা যায়।
  • ধ্যান বা প্রার্থনা শেষে হাত ঘষলে মন আরও প্রশান্ত হয়।

সাধারণ প্রশ্ন

প্রশ্ন: যোগা শেষে হাত না ঘষলে কি কোনো ক্ষতি হবে?
না, ক্ষতি হবে না। তবে হাত ঘষা শরীর ও মনের জন্য বাড়তি উপকার নিয়ে আসে।

প্রশ্ন: শুধু যোগ শেষে নয়, অন্য সময়ও কি হাত ঘষতে পারি?
অবশ্যই পারেন। ক্লান্তি বা মানসিক চাপের সময় হাত ঘষা খুবই কার্যকর।

প্রশ্ন: এটা কি শুধু আধ্যাত্মিক ব্যাপার?
না। হাত ঘষার পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে। এটি শরীরের স্নায়ু উদ্দীপ্ত করে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।


উপসংহার

যোগ শেষে হাত ঘষা একটি ছোট্ট অথচ অত্যন্ত কার্যকর অভ্যাস। এটি শরীরকে নতুন শক্তি দেয়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, মনোযোগ ফিরিয়ে আনে এবং ভেতরের শান্তিকে বাইরের জীবনে ছড়িয়ে দেয়। একে এক কথায় বলা যায়, যোগ শেষে হাত ঘষা হলো শরীর-মনকে নতুনভাবে জাগিয়ে তোলার সহজ উপায়।


Share This Post