ডায়ালাইসিস কী এবং কেন করা হয়?

ডায়ালাইসিস কী এবং কেন করা হয়?

Share This Post


মানবদেহের দুটি কিডনি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। এই দুটি ছোট অঙ্গ নীরবে শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করে, যেমন – রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল ছেঁকে বের করে দেওয়া, শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট (যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম) ভারসাম্য বজায় রাখা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন তৈরি করা, এবং লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করা। কিন্তু যখন কিডনিগুলো কোনো কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তাদের কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, তখন এই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন হতে পারে না। ফলে শরীরে বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ জমা হতে শুরু করে, যা একসময় জীবন-হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে, কিডনির কাজ কৃত্রিমভাবে সম্পন্ন করার জন্য যে চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োজন হয়, তাকেই ডায়ালাইসিস বলা হয়।

ডায়ালাইসিস কোনো নিরাময় পদ্ধতি নয়, বরং এটি একটি জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা যা অকেজো কিডনির কাজগুলো সাময়িকভাবে প্রতিস্থাপন করে। এটি রোগীকে সুস্থ রাখতে এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে সহায়তা করে, যতক্ষণ না কিডনি প্রতিস্থাপন সম্ভব হয় অথবা রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল হয়।


ডায়ালাইসিস কী?

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ডায়ালাইসিস হলো একটি প্রক্রিয়া যেখানে একটি মেশিনের সাহায্যে বা শরীরের নিজস্ব ঝিল্লির মাধ্যমে রক্তকে পরিস্রাবণ করে বর্জ্য পদার্থ, টক্সিন এবং অতিরিক্ত তরল শরীর থেকে বের করে দেওয়া হয়। এটি অকেজো কিডনির কার্যকারিতা কৃত্রিমভাবে সম্পন্ন করে।

মানুষের রক্তে যখন ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং অতিরিক্ত জলীয় পদার্থ বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়ে যায়, তখন কিডনি বিশেষজ্ঞ (নেফ্রোলজিস্ট) ডায়ালাইসিসের পরামর্শ দেন।


কেন ডায়ালাইসিস করা হয়?

ডায়ালাইসিসের মূল কারণ হলো কিডনি ফেইলিওর বা কিডনির চূড়ান্ত পর্যায়ের রোগ (End-Stage Renal Disease – ESRD)। কিডনি যখন তার কার্যক্ষমতার ৮৫-৯০% হারিয়ে ফেলে এবং শরীরে বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয়।

ডায়ালাইসিসের প্রধান কারণগুলো হলো:

  • তীব্র কিডনি বিকলতা (Acute Kidney Injury – AKI): হঠাৎ করে কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দিলে, যা প্রায়শই অস্থায়ী হয়। সংক্রমণ, তীব্র রক্তক্ষরণ, বা নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এটি হতে পারে। এক্ষেত্রে ডায়ালাইসিস সাময়িক হতে পারে।
  • দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (Chronic Kidney Disease – CKD): ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া। যখন এটি শেষ পর্যায়ে পৌঁছায় (ESRD), তখন স্থায়ীভাবে ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়।
  • বিষাক্ত পদার্থের অত্যধিক জমা: রক্তে পটাশিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইটের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেলে, যা হৃদপিণ্ডের জন্য মারাত্মক হতে পারে।
  • অতিরিক্ত তরল জমা: কিডনি জল সরাতে না পারলে ফুসফুসে জল জমতে পারে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট হয়।
  • বিষক্রিয়া: নির্দিষ্ট কিছু বিষাক্ত পদার্থ (যেমন লিথিয়াম, অ্যাসপিরিন) শরীর থেকে সরাতে কিডনি অক্ষম হলে ডায়ালাইসিস ব্যবহার করা যেতে পারে।

ডায়ালাইসিস কত প্রকার?

ডায়ালাইসিস মূলত দুই প্রকারের হয়:

১. হেমোডায়ালাইসিস (Hemodialysis):

এটি সবচেয়ে প্রচলিত ডায়ালাইসিস পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে রোগীর শরীরের রক্ত একটি মেশিনের (ডায়ালাইজার বা কৃত্রিম কিডনি) মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা হয়। ডায়ালাইজারে একটি বিশেষ ফিল্টার থাকে, যা রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল ছেঁকে বের করে দেয়। পরিশোধিত রক্ত আবার রোগীর শরীরে ফেরত পাঠানো হয়।

  • প্রস্তুতি: হেমোডায়ালাইসিস শুরু করার আগে রোগীর বাহুতে একটি ফিস্টুলা (ধমনী ও শিরার সংযোগ), গ্রাফট (কৃত্রিম নালীর সংযোগ), অথবা ক্যাথেটার (ঘাড় বা বুকে) স্থাপন করা হয়, যা মেশিন থেকে রক্ত টানতে এবং ফেরত পাঠাতে সাহায্য করে।
  • সময়কাল ও ফ্রিকোয়েন্সি: সাধারণত সপ্তাহে ৩ বার, প্রতি সেশনে ৩-৫ ঘণ্টা করে ডায়ালাইসিস করা হয়। এটি হাসপাতাল বা ডায়ালাইসিস সেন্টারে করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে বাড়িতেও করা সম্ভব।

২. পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস (Peritoneal Dialysis – PD):

এই পদ্ধতিতে রোগীর নিজের শরীরের পেরিটোনিয়াম (পেটের ভিতরের গহ্বরের আবরক ঝিল্লি) ব্যবহার করা হয় ফিল্টার হিসেবে। পেটের গহ্বরে একটি ছোট ক্যাথেটার স্থাপন করা হয়। এই ক্যাথেটারের মাধ্যমে একটি বিশেষ ডায়ালাইসিস সলিউশন (ডায়ালিসেট) পেটের গহ্বরে প্রবেশ করানো হয়। এই সলিউশনটি বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত তরলকে রক্তনালী থেকে পেরিটোনিয়াল ঝিল্লির মাধ্যমে শোষণ করে। নির্দিষ্ট সময় পর (সাধারণত ৪-৬ ঘণ্টা) এই ব্যবহৃত সলিউশনটি শরীর থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং নতুন সলিউশন প্রবেশ করানো হয়।

  • সুবিধা: এটি বাড়িতে বা কর্মক্ষেত্রে করা যায়, যা রোগীর জন্য অধিক স্বাচ্ছন্দ্যময়। এটি সাধারণত দিনে কয়েকবার (Continuous Ambulatory Peritoneal Dialysis – CAPD) অথবা রাতে একটি মেশিন ব্যবহার করে (Automated Peritoneal Dialysis – APD) করা হয়।
  • কম্প্লিকেশন: সংক্রমণের ঝুঁকি (পেরিটোনাইটিস) একটি সম্ভাব্য জটিলতা।

কোন কোন রোগে ডায়ালাইসিস করা হয়?

ডায়ালাইসিস মূলত কিডনি অকেজো হওয়ার কারণে করা হয়। যে রোগগুলো কিডনিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, সেগুলো হলো:

  • ডায়াবেটিস: কিডনি ফেইলিওরের প্রধান কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। উচ্চ রক্তে শর্করা কিডনির ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলোকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়।
  • উচ্চ রক্তচাপ: অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ কিডনির রক্তনালীগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
  • গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস: এটি কিডনির ছাঁকনি ইউনিট (গ্লোমেরুলি) এর প্রদাহ, যা কিডনির কার্যকারিতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে।
  • পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ (PKD): এটি একটি বংশগত রোগ যেখানে কিডনিতে অসংখ্য সিস্ট বা জলীয় থলি তৈরি হয়, যা কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট করে।
  • ইউরিনারি ট্র্যাক্ট অবস্ট্রাকশন: দীর্ঘস্থায়ী প্রস্রাবের নালীর প্রতিবন্ধকতা (যেমন প্রোস্টেট বড় হওয়া, কিডনিতে পাথর) কিডনির ক্ষতির কারণ হতে পারে।
  • নির্দিষ্ট কিছু অটোইমিউন রোগ: যেমন লুপাস।
  • কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ কিডনির ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে।

কিডনি রোগীর খাবার কি কি? এবং ডায়ালাইসিস রোগীর খাবারের তালিকা কী?

কিডনি রোগী এবং ডায়ালাইসিস রোগীর জন্য খাবার তালিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ মানুষের থেকে ভিন্ন হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো বর্জ্য পদার্থের (সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস) মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করা।

সাধারণ কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা (যারা ডায়ালাইসিসে নেই):

  • প্রোটিন: পরিমিত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করতে হয়, অতিরিক্ত নয়। সাধারণত উচ্চ-মানের প্রোটিন যেমন চর্বিহীন মাংস, মাছ, ডিম, ডাল।
  • সোডিয়াম: কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। লবণযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • পটাশিয়াম ও ফসফরাস: কিডনির ক্ষতির মাত্রার উপর নির্ভর করে পটাশিয়াম ও ফসফরাস নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কিছু উচ্চ পটাশিয়াম (যেমন কলা, টমেটো, আলু) ও উচ্চ ফসফরাস (যেমন দুধ, দই, বাদাম) যুক্ত খাবার সীমিত করতে হতে পারে।
  • জল: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পর্যাপ্ত জল পান করতে হবে।

ডায়ালাইসিস রোগীর খাবারের তালিকা:

ডায়ালাইসিস রোগীর জন্য কিছু কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হয়, কারণ ডায়ালাইসিস শরীর থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে বর্জ্য পদার্থ সরাতে পারে।

  • উচ্চ প্রোটিন: ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়ায় শরীর থেকে প্রোটিন বেরিয়ে যায়, তাই ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য উচ্চ-মানের প্রোটিন (যেমন – ডিমের সাদা অংশ, চর্বিহীন মুরগির মাংস, মাছ) অত্যন্ত জরুরি।
  • কঠোর সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণ: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত জল কমাতে সোডিয়াম কঠোরভাবে সীমিত করতে হয়।
  • কঠোর পটাশিয়াম নিয়ন্ত্রণ: কলা, কমলা, টমেটো, ডাবের জল, শুকনো ফল – এই সব উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হয়।
  • কঠোর ফসফরাস নিয়ন্ত্রণ: দুধ, দই, পনির, বাদাম, বীজ, ডাল, চকোলেট, কোমল পানীয় – এগুলো এড়িয়ে চলতে হয়। প্রয়োজনে ডাক্তার ফসফরাস বাইন্ডার ঔষধ দেন।
  • তরল নিয়ন্ত্রণ: রোগীর প্রস্রাবের পরিমাণ এবং ডায়ালাইসিসের ধরণ অনুযায়ী তরল গ্রহণের মাত্রা নির্ধারিত হয়। অতিরিক্ত জল পান মারাত্মক হতে পারে।
  • পর্যাপ্ত ক্যালরি: শক্তি বজায় রাখার জন্য ভাত, রুটি, পাস্তা, এবং স্বাস্থ্যকর তেল থেকে পর্যাপ্ত ক্যালরি গ্রহণ করতে হয়।

গুরুত্বপূর্ণ: একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ এবং রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের সাথে পরামর্শ করে রোগীর ব্যক্তিগত অবস্থার উপর ভিত্তি করে একটি কাস্টমাইজড খাবার তালিকা তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি।


কত পয়েন্ট থাকলে কিডনি ভালো থাকে?

কিডনির কার্যকারিতা মূলত গ্লোমেরুলার পরিস্রাবণ হার (Glomerular Filtration Rate – GFR) দিয়ে পরিমাপ করা হয়। এটি রক্ত পরীক্ষা (ক্রিয়েটিনিন স্তর) ব্যবহার করে অনুমান করা হয়।

  • GFR 90 বা তার বেশি (mL/min/1.73m2): এটি সাধারণত স্বাভাবিক কিডনির কার্যকারিতা নির্দেশ করে।
  • GFR 60-89: এটি কিডনির কার্যকারিতা কিছুটা কমে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে, বিশেষ করে যদি কিডনি ক্ষতির অন্যান্য লক্ষণ (যেমন প্রোটিনুরিয়া) থাকে।
  • GFR 15-59: এটি মধ্যম থেকে গুরুতর কিডনি রোগের ইঙ্গিত দেয়।
  • GFR 15-এর নিচে: এটি কিডনি ফেইলিওর বা শেষ পর্যায়ের কিডনি রোগের ইঙ্গিত দেয়, যখন ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়।

সুতরাং, GFR এর মান ৯০ বা তার বেশি থাকলে কিডনি ভালো থাকে বলে ধরে নেওয়া হয়।


ডায়ালাইসিসের বিকল্প কি কি?

ডায়ালাইসিসের প্রধান এবং একমাত্র স্থায়ী বিকল্প হলো কিডনি প্রতিস্থাপন (Kidney Transplant)

  • কিডনি প্রতিস্থাপন: এটি একটি অস্ত্রোপচার যেখানে একজন সুস্থ ব্যক্তির কিডনি (জীবিত দাতা বা মৃত দাতা) রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। সফল কিডনি প্রতিস্থাপন রোগীকে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন থেকে মুক্তি দিতে পারে এবং জীবনযাত্রার মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে। তবে, এর জন্য উপযুক্ত দাতা খুঁজে পাওয়া, অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি এবং প্রত্যাখ্যান প্রতিরোধের জন্য আজীবন ঔষধ সেবনের প্রয়োজন হয়।

অন্যান্য বিকল্প গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে, যেমন:

  • কৃত্রিম কিডনি ডিভাইস (Artificial Kidney Devices): পোর্টেবল বা পরিধানযোগ্য কৃত্রিম কিডনি ডিভাইস নিয়ে গবেষণা চলছে যা রোগীদের জন্য আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় হতে পারে।
  • কিডনি টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং: ল্যাবরেটরিতে কিডনির কোষ বা টিস্যু তৈরি করার প্রচেষ্টা চলছে।

কিডনির স্বাভাবিক সাইজ কত mm?

একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের কিডনির স্বাভাবিক দৈর্ঘ্য সাধারণত ১০ থেকে ১২ সেন্টিমিটার (১০০-১২০ মিমি), প্রস্থ ৫ থেকে ৬ সেন্টিমিটার (৫০-৬০ মিমি), এবং পুরুত্ব ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার (৩০-৪০ মিমি) হয়। পুরুষদের কিডনি মহিলাদের কিডনির চেয়ে সামান্য বড় হয়। এটি আল্ট্রাসাউন্ড বা অন্যান্য ইমেজিং টেস্টের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়। কিডনি রোগ বা অন্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে কিডনির আকার ছোট বা বড় হতে পারে।


ডায়ালাইসিসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী কী?

ডায়ালাইসিস একটি জীবন রক্ষাকারী প্রক্রিয়া হলেও, এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে:

হেমোডায়ালাইসিসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

  • নিম্ন রক্তচাপ (Hypotension): ডায়ালাইসিসের সময় শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বের করে দেওয়ার কারণে রক্তচাপ কমে যেতে পারে, যার ফলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা এবং বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • পেশী ক্র্যাম্প: পেশীতে টান বা ক্র্যাম্প অনুভব হতে পারে।
  • বমি বমি ভাব ও বমি: বিশেষ করে সেশনের শুরুতে।
  • মাথাব্যথা: সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
  • ক্লান্তি: ডায়ালাইসিস সেশনের পর অবসাদ অনুভব করতে পারেন।
  • সংক্রমণ: ফিস্টুলা, গ্রাফট বা ক্যাথেটার সাইটে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
  • অ্যাররিথমিয়া (অনিয়মিত হৃদস্পন্দন): ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যের পরিবর্তনের কারণে হতে পারে।
  • রক্তক্ষরণ: হেপারিনের মতো রক্ত পাতলা করার ওষুধ ব্যবহারের কারণে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ে।

পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

  • পেরিটোনাইটিস (Peritonitis): পেটের ভিতরের ঝিল্লির সংক্রমণ, যা গুরুতর এবং প্রাণঘাতী হতে পারে। এটি প্রধান এবং সবচেয়ে সাধারণ জটিলতা।
  • ওজন বৃদ্ধি: ডায়ালাইসিস সলিউশনে চিনি থাকে, যা শরীর শোষণ করতে পারে এবং ওজন বাড়াতে পারে।
  • হার্নিয়া: পেটের গহ্বরে তরল জমার কারণে চাপ বেড়ে হার্নিয়া হতে পারে।
  • ক্যাথেটার সাইটে সংক্রমণ: ক্যাথেটারের প্রবেশস্থলে সংক্রমণ হতে পারে।
  • পেটে অস্বস্তি বা ফোলা: পেটে সলিউশন থাকার কারণে হতে পারে।

ডায়ালাইসিসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি প্রতিটি রোগীর ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।



Share This Post