৫টি সহজ Home Exercise

৫টি সহজ Home Exercise যা আপনার জীবন বদলে দেবে!

Share This Post

আমরা সবাই সুস্থ থাকতে চাই, কিন্তু জিমে যাওয়ার সময় বা সুযোগ সবসময় হয়ে ওঠে না। তবে চিন্তা নেই! আপনার ঘরের আরামেই এমন কিছু সহজ ব্যায়াম আছে যা আপনাকে ফিট রাখতে সাহায্য করবে। আজ আমরা এমন ৫টি দারুণ হোম এক্সারসাইজ নিয়ে কথা বলব, যা আপনার শরীরকে চাঙ্গা রাখবে এবং আপনাকে দেবে এক নতুন উদ্যম। চলুন, শুরু করা যাক!

১. জাম্পিং জ্যাক (Jumping Jack): আপনার হার্টের বন্ধু!

ছোটবেলায় পিটি ক্লাসে এই ব্যায়ামটা আমরা সবাই করেছি, তাই না? জাম্পিং জ্যাক শুধু মজারই নয়, এটি একটি অসাধারণ কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম। এটি আপনার হার্ট রেট বাড়ায়, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং পুরো শরীরের পেশী সক্রিয় করে তোলে। এটি ওয়ার্ম-আপ হিসেবে দারুণ কাজ করে এবং ক্যালরি পোড়াতেও সাহায্য করে।

কীভাবে করবেন?

1.সোজা হয়ে দাঁড়ান, পা দুটো একসাথে রাখুন এবং হাত দুটো শরীরের দু’পাশে সোজা করে রাখুন।

2.একসাথে লাফিয়ে পা দুটো কাঁধের চেয়ে একটু বেশি চওড়া করে ছড়িয়ে দিন এবং হাত দুটো মাথার উপরে তালি দেওয়ার ভঙ্গিতে তুলুন।

3.আবার লাফিয়ে আগের অবস্থানে ফিরে আসুন।

কেন করবেন?

•হার্টের স্বাস্থ্য: এটি আপনার হার্টকে শক্তিশালী করে এবং কার্ডিওভাসকুলার এন্ডুরেন্স বাড়ায়।

•ক্যালরি পোড়ানো: দ্রুত ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে, যা ওজন কমাতে সহায়ক।

•পুরো শরীরের ব্যায়াম: হাত, পা, কোর – সব পেশী একসাথে কাজ করে।

•মুড বুস্টার: এন্ডোরফিন নিঃসরণে সাহায্য করে, যা আপনার মনকে সতেজ রাখে।

টিপস: শুরুতে ধীরে ধীরে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে গতি ও সংখ্যা বাড়ান।

২. ক্রাঞ্চ (Crunch): পেটের মেদ কমানোর সেরা উপায়!

পেটের মেদ কমানো অনেকের কাছেই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ক্রাঞ্চ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনার সেরা বন্ধু হতে পারে। এটি আপনার পেটের পেশী, বিশেষ করে অ্যাবস (abdominals) শক্তিশালী করে এবং টোন করে। সঠিক পদ্ধতিতে ক্রাঞ্চ করলে আপনি দ্রুত ফলাফল দেখতে পাবেন।

কীভাবে করবেন?

1.মেঝেতে চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাঁটু ভাঁজ করুন এবং পা দুটো মেঝেতে রাখুন।

2.হাত দুটো মাথার পেছনে রাখুন অথবা বুকের উপর ক্রস করে রাখুন।

3.পেটের পেশী ব্যবহার করে আপনার কাঁধ এবং মাথার উপরের অংশ মেঝে থেকে তুলুন। আপনার পিঠের নিচের অংশ যেন মেঝেতে লেগে থাকে।

4.এক সেকেন্ডের জন্য এই অবস্থান ধরে রাখুন এবং ধীরে ধীরে আবার নিচে নেমে আসুন।

কেন করবেন?

•পেটের পেশী শক্তিশালী: এটি আপনার পেটের পেশীগুলিকে শক্তিশালী এবং সুগঠিত করে।

•কোর স্ট্রেংথ: আপনার কোর মাসলকে শক্তিশালী করে, যা শরীরের ভারসাম্য এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

•সহজ এবং সুবিধাজনক: কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই, যেকোনো জায়গায় করা যায়।

টিপস: ঘাড়ের উপর চাপ না দিয়ে পেটের পেশী ব্যবহার করে শরীর তোলার চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে করুন এবং প্রতিটি রেপে পেশীর সংকোচন অনুভব করুন।

৩. স্কোয়াট (Squat): পায়ের এবং নিতম্বের শক্তি!

স্কোয়াটকে ব্যায়ামের রাজা বলা হয়, কারণ এটি একইসাথে শরীরের একাধিক বড় পেশী গ্রুপকে কাজ করায়। এটি আপনার পা, নিতম্ব এবং কোরের পেশী শক্তিশালী করে। নিয়মিত স্কোয়াট করলে আপনার শরীরের নিচের অংশের শক্তি এবং নমনীয়তা অনেক বাড়বে।

কীভাবে করবেন?

1.সোজা হয়ে দাঁড়ান, পা দুটো কাঁধ বরাবর ফাঁকা রাখুন এবং পায়ের পাতা সামান্য বাইরের দিকে ঘুরিয়ে দিন।

2.হাত দুটো সামনে সোজা করে রাখুন অথবা বুকের উপর ক্রস করে রাখুন।

3.ধীরে ধীরে হাঁটু ভাঁজ করে এমনভাবে নিচে নামুন যেন মনে হয় আপনি একটি চেয়ারে বসছেন। আপনার নিতম্ব যেন হাঁটুর সমান্তরাল বা তার নিচে যায়। পিঠ সোজা রাখুন এবং বুক উঁচু করে রাখুন।

4.গোড়ালি দিয়ে চাপ দিয়ে আবার উপরের দিকে উঠুন।

কেন করবেন?

•পেশী গঠন: পা এবং নিতম্বের পেশী শক্তিশালী করে এবং মাসল মাস বাড়াতে সাহায্য করে।

•ক্যালরি পোড়ানো: যেহেতু এটি একাধিক বড় পেশীকে কাজ করায়, তাই এটি প্রচুর ক্যালরি পোড়ায়।

•কার্যকরী শক্তি: দৈনন্দিন কাজ যেমন বসা, ওঠা, জিনিস তোলা ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি বাড়ায়।

•হাড়ের স্বাস্থ্য: হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

টিপস: নিচে নামার সময় হাঁটু যেন পায়ের পাতার বাইরে না যায়। আপনার পিঠ সবসময় সোজা রাখুন এবং কোর মাসল টাইট রাখুন।

৪. পুল-আপ (Pull-Up): উপরের শরীরের শক্তির প্রতীক!

পুল-আপ একটি চ্যালেঞ্জিং কিন্তু অত্যন্ত ফলপ্রসূ ব্যায়াম যা আপনার পিঠ, কাঁধ এবং হাতের পেশীগুলিকে অসাধারণভাবে শক্তিশালী করে। এটি আপনার শরীরের উপরের অংশের সামগ্রিক শক্তি এবং সহনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। যদিও এর জন্য একটি পুল-আপ বার প্রয়োজন, তবে এটি আপনার হোম জিমের একটি দারুণ সংযোজন হতে পারে।

কীভাবে করবেন?

1.একটি পুল-আপ বারে হাত দিয়ে ধরুন, হাতের তালু আপনার থেকে দূরে থাকবে এবং হাত কাঁধের চেয়ে সামান্য চওড়া করে ধরুন।

2.পুরোপুরি ঝুলে পড়ুন, হাত দুটো সোজা থাকবে।

3.আপনার পিঠ এবং হাতের পেশী ব্যবহার করে শরীরকে উপরের দিকে টানুন যতক্ষণ না আপনার চিবুক বারের উপরে আসে।

4.ধীরে ধীরে আবার নিচে নেমে আসুন, হাত দুটো সোজা করে দিন।

কেন করবেন?

•পিঠের পেশী শক্তিশালী: এটি আপনার ল্যাটস (latissimus dorsi) সহ পিঠের উপরের অংশের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে।

•হাতের শক্তি: বাইসেপস এবং ফোরআর্মসকে শক্তিশালী করে।

•কোর স্ট্রেংথ: শরীরকে স্থিতিশীল রাখতে কোর মাসলকেও কাজ করায়।

•কার্যকরী শক্তি: দৈনন্দিন জীবনে জিনিসপত্র তোলা বা টানার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি বাড়ায়।

টিপস: যদি আপনি শুরুতে একটি সম্পূর্ণ পুল-আপ করতে না পারেন, তাহলে অ্যাসিস্টেড পুল-আপ (যেমন একটি চেয়ার ব্যবহার করে বা রেসিস্টেন্স ব্যান্ড ব্যবহার করে) দিয়ে শুরু করতে পারেন। নেগেটিভ পুল-আপ (শুধু নিচে নামার অংশটুকু) অনুশীলন করাও খুব উপকারী।

আরও পড়ুন:পুরুষদের টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধির সেরা ব্যায়াম

৫. পুশ-আপ (Push-Up): বুকের এবং হাতের শক্তি!

পুশ-আপ একটি ক্লাসিক এবং অত্যন্ত কার্যকর ব্যায়াম যা আপনার বুক, কাঁধ এবং ট্রাইসেপসকে শক্তিশালী করে। এটি আপনার কোর মাসলকেও কাজ করায় এবং পুরো শরীরের উপরের অংশের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময় করা যায় এবং এর জন্য কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না।

কীভাবে করবেন?

1.মেঝেতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুটো কাঁধের চেয়ে সামান্য চওড়া করে মেঝেতে রাখুন, হাতের তালু মেঝের উপর থাকবে।

2.পায়ের আঙ্গুল এবং হাতের তালুর উপর ভর করে শরীরকে উপরের দিকে তুলুন, শরীর সোজা থাকবে (মাথা থেকে গোড়ালি পর্যন্ত)।

3.ধীরে ধীরে কনুই ভাঁজ করে শরীরকে নিচের দিকে নামান যতক্ষণ না আপনার বুক প্রায় মেঝে স্পর্শ করে।

4.আবার হাত সোজা করে শরীরকে উপরের দিকে ঠেলে তুলুন।

কেন করবেন?

•বুকের পেশী শক্তিশালী: এটি আপনার পেক্টোরাল মাসলকে (বুকের পেশী) শক্তিশালী করে।

•কাঁধ এবং ট্রাইসেপসের শক্তি: কাঁধ এবং হাতের পেছনের অংশের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে।

•কোর স্ট্রেংথ: শরীরকে সোজা রাখতে কোর মাসলকে সক্রিয় রাখে।

•সহজ এবং সুবিধাজনক: যেকোনো জায়গায় করা যায় এবং কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না।

টিপস: শরীরকে সবসময় সোজা রাখুন, নিতম্ব যেন খুব বেশি উপরে বা নিচে না যায়। যদি শুরুতে সম্পূর্ণ পুশ-আপ কঠিন মনে হয়, তাহলে হাঁটু গেড়ে (knee push-up) শুরু করতে পারেন।

শেষ কথা

এই ৫টি সহজ হোম এক্সারসাইজ আপনার ফিটনেস যাত্রায় দারুণ সঙ্গী হতে পারে। নিয়মিত অনুশীলন এবং সঠিক ফর্ম বজায় রাখলে আপনি দ্রুত এর সুফল দেখতে পাবেন। মনে রাখবেন, সুস্থ শরীর মানেই সুস্থ মন। তাই আজই শুরু করুন আপনার ফিটনেস রুটিন এবং হয়ে উঠুন আপনার সেরা সংস্করণ!

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

১. এই ব্যায়ামগুলো কি সবার জন্য উপযুক্ত?

হ্যাঁ, এই ব্যায়ামগুলো বেশিরভাগ মানুষের জন্য উপযুক্ত। তবে যদি আপনার কোনো শারীরিক অসুস্থতা বা ব্যথা থাকে, তাহলে ব্যায়াম শুরু করার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া ভালো।

২. প্রতিদিন কতক্ষণ এই ব্যায়ামগুলো করা উচিত?

শুরুতে প্রতিটি ব্যায়ামের ১০-১৫টি রেপ ৩ সেট করে করতে পারেন। ধীরে ধীরে আপনার শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী রেপ এবং সেটের সংখ্যা বাড়াতে পারেন। প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম করার লক্ষ্য রাখতে পারেন।

৩. এই ব্যায়ামগুলো করতে কি কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন?

জাম্পিং জ্যাক, ক্রাঞ্চ, স্কোয়াট এবং পুশ-আপের জন্য কোনো সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই। পুল-আপের জন্য একটি পুল-আপ বার প্রয়োজন হবে।

৪. কতদিনে ফলাফল দেখা যাবে?

নিয়মিত এবং সঠিক পদ্ধতিতে ব্যায়াম করলে সাধারণত ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে আপনি শারীরিক পরিবর্তন অনুভব করতে পারবেন। তবে ফলাফল ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।

৫. ব্যায়ামের পাশাপাশি আর কী করলে দ্রুত ফিট হওয়া যাবে?

ব্যায়ামের পাশাপাশি সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ কমানোও ফিটনেস অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করাও জরুরি।

৬. পুল-আপ করতে না পারলে কী করব?

যদি শুরুতে সম্পূর্ণ পুল-আপ করতে না পারেন, তাহলে অ্যাসিস্টেড পুল-আপ (যেমন একটি চেয়ার ব্যবহার করে বা রেসিস্টেন্স ব্যান্ড ব্যবহার করে) দিয়ে শুরু করতে পারেন। নেগেটিভ পুল-আপ (শুধু নিচে নামার অংশটুকু) অনুশীলন করাও খুব উপকারী।

৭. পুশ-আপ কঠিন মনে হলে কী করব?

যদি সম্পূর্ণ পুশ-আপ কঠিন মনে হয়, তাহলে হাঁটু গেড়ে (knee push-up) শুরু করতে পারেন। এটি আপনার বুকের এবং হাতের পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে এবং ধীরে ধীরে আপনি সম্পূর্ণ পুশ-আপের জন্য প্রস্তুত হতে পারবেন।


Share This Post