Chicken Liver খাওয়া কি ক্ষতিকর?

Chicken Liver: সুপারফুড নাকি কোলেস্টেরলের বোমা?

Share This Post

মুরগির কলিজা (Chicken Liver) একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার, যা বহু শতাব্দী ধরে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে খাওয়া হয়ে আসছে। এটি প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ লবণের একটি চমৎকার উৎস। অনেকেই এর স্বাদ পছন্দ না করলেও, এর স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি অনস্বীকার্য। এই আর্টিকেলে, আমরা মুরগির কলিজার পুষ্টিগুণ (Chicken Liver Nutrition) বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব এবং দেখব কেন এটি আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ করা উচিত।

Table of Contents

প্রতি ১০০ গ্রাম মুরগির কলিজার পুষ্টি উপাদান | Nutritional Value of Chicken Liver per 100g :

প্রতি ১০০ গ্রাম মুরগির কলিজায় প্রায় নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদানগুলি পাওয়া যায়:

  • ক্যালোরি (Calories): প্রায় ১৩৫ কিলোক্যালরি
  • প্রোটিন (Protein): ২৫-২৬ গ্রাম
  • ফ্যাট (Fat): ৪-৫ গ্রাম
    • স্যাচুরেটেড ফ্যাট (Saturated Fat): ১.৬ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট (Carbohydrates): 0 গ্রাম
  • ফাইবার (Fiber): 0 গ্রাম
  • ভিটামিন (Vitamins):
    • ভিটামিন এ (Vitamin A): ১২০০০-১৪০০০ আইইউ (IU) – দৈনিক চাহিদার প্রায় ৬৫০-৭০০%
    • ভিটামিন বি১২ (Vitamin B12): ২০-২৫ মাইক্রোগ্রাম (mcg) – দৈনিক চাহিদার ৮০০-১০০০%
    • ফোলেট (Folate): ১৪০-১৫০ মাইক্রোগ্রাম (mcg) – দৈনিক চাহিদার ৩৫-৩৭%
    • রাইবোফ্লেভিন (Riboflavin): ২-২.৫ মিলিগ্রাম (mg) – দৈনিক চাহিদার ১২০-১৫০%
    • নিয়াসিন (Niacin): ৮-১০ মিলিগ্রাম (mg) – দৈনিক চাহিদার ৪০-৫০%
    • ভিটামিন বি৬ (Vitamin B6): ০.৫-০.৬ মিলিগ্রাম (mg) – দৈনিক চাহিদার ২৫-৩০%
    • ভিটামিন সি (Vitamin C): ৮-১০ মিলিগ্রাম (mg)
    • ভিটামিন ডি (Vitamin D): সামান্য পরিমাণে
    • ভিটামিন ই (Vitamin E): সামান্য পরিমাণে
    • কোলিন (Choline): ২৯০-৩০০ মিলিগ্রাম (mg)
  • খনিজ পদার্থ (Minerals):
    • আয়রন (Iron): ৯-১২ মিলিগ্রাম (mg) – দৈনিক চাহিদার ৫০-৬৬%
    • কপার (Copper): ৯-১২ মিলিগ্রাম (mg) – দৈনিক চাহিদার ৪৫০-৬০০%
    • জিঙ্ক (Zinc): ৪-৫ মিলিগ্রাম (mg) – দৈনিক চাহিদার ২৭-৩৩%
    • সেলেনিয়াম (Selenium): ৭০-৮০ মাইক্রোগ্রাম (mcg) – দৈনিক চাহিদার ১০০-১১৫%
    • পটাশিয়াম (Potassium): ২৫০-৩০০ মিলিগ্রাম (mg)
    • ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium): ২০-২৫ মিলিগ্রাম (mg)
    • ফসফরাস (Phosphorus): ২৫০-৩০০ মিলিগ্রাম (mg)

মুরগির কলিজার স্বাস্থ্য উপকারিতা | Health Benefits of Chicken Liver:

মুরগির কলিজা আমাদের শরীরের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • ভিটামিন এ-এর চমৎকার উৎস (Excellent Source of Vitamin A): মুরগির কলিজায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক।
  • ভিটামিন বি১২-এর ভাণ্ডার (Rich in Vitamin B12): ভিটামিন বি১২ স্নায়ু এবং রক্তের কোষকে সুস্থ রাখতে অপরিহার্য। এটি ডিএনএ (DNA) তৈরিতেও সাহায্য করে। মুরগির কলিজা এই ভিটামিনের একটি উৎকৃষ্ট উৎস।
  • আয়রনের যোগান (Provides Iron): কলিজাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা রক্তাল্পতা (Anemia) প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করতেও সাহায্য করে।
  • প্রোটিনের উৎস (Source of Protein): যারা শরীরচর্চা করেন বা বেশি প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে চান, তাঁদের জন্য মুরগির কলিজা একটি ভালো বিকল্প। এটি শরীরের মাংসপেশি গঠনে সাহায্য করে।
  • কপার ও জিঙ্কের সরবরাহ (Source of Copper and Zinc): কপার এবং জিঙ্ক শরীরের বিভিন্ন এনজাইমের কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজনীয়। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং শরীরের ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে।
  • Rich in Choline: কোলিন মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়ক। এটি স্নায়ু সংকেত পরিবহনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মুরগির কলিজা খাওয়ার নিয়ম | How to Eat Chicken Liver :

মুরগির কলিজা বিভিন্ন উপায়ে রান্না করা যায়। বাঙালি রান্নায় এটি ভাজা, ঝোল বা কারি হিসেবে খাওয়া হয়। কলিজা রান্নার সময় স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত, যেমন কম তেলে ভাজা বা সেদ্ধ করে খাওয়া।

কিছু সতর্কতা :

যদিও মুরগির কলিজা অত্যন্ত পুষ্টিকর, কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:

  • উচ্চ কোলেস্টেরল (High Cholesterol): মুরগির কলিজায় কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে। তাই যাদের হৃদরোগ বা কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে, তাদের এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
  • ভিটামিন এ-এর বিষক্রিয়া (Vitamin A Toxicity): অতিরিক্ত পরিমাণে কলিজা খেলে শরীরে ভিটামিন এ-এর পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, যা বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  • সংক্রমণের ঝুঁকি (Risk of Infection): কলিজা ভালোভাবে রান্না করা উচিত, কারণ কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ কলিজা খেলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

কিছু প্রশ্ন ও উত্তর :

মুরগির কলিজা কি শরীরের জন্য ভালো?

হ্যাঁ, মুরগির কলিজা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটি ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস।

কলিজাতে কি ভিটামিন বি১২ আছে?

কলিজাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি১২ থাকে, যা স্নায়ু এবং রক্তের কোষের জন্য অপরিহার্য।

মুরগির কলিজা (Chicken Liver) কি ওজন বাড়ায়?

পরিমিত পরিমাণে খেলে মুরগির কলিজা ওজন বাড়ায় না। এটি প্রোটিনের একটি ভালো উৎস এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

প্রতিদিন কলিজা খাওয়া কি ক্ষতিকর?

প্রতিদিন কলিজা খাওয়া উচিত নয়। সপ্তাহে ১-২ দিন পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে।

কলিজা কিভাবে রান্না করা উচিত?

কলিজা ভালোভাবে সেদ্ধ করে বা কম তেলে ভেজে খাওয়া উচিত।

কলিজা কি শিশুদের জন্য ভালো?

কলিজা শিশুদের জন্য উপকারী, তবে অল্প পরিমাণে দেওয়া উচিত।

কলিজাতে কি কোলেস্টেরল বেশি?

হ্যাঁ, কলিজাতে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে। তাই হৃদরোগীদের জন্য এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

কলিজা কি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিরাপদ?

গর্ভবতী মহিলাদের কলিজা পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত, কারণ এতে ভিটামিন এ-এর পরিমাণ বেশি থাকে, যা ভ্রূণের ক্ষতি করতে পারে।

কলিজা খেলে কি অ্যালার্জি হতে পারে?

কিছু মানুষের কলিজাতে অ্যালার্জি হতে পারে, তবে এটি খুব সাধারণ নয়।

কলিজা কি হজম করা কঠিন?

কলিজা সহজে হজম হয়, তবে বেশি পরিমাণে খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে।

মুরগির কলিজা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার, তবে এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত এবং রান্নার সময় স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।


প্রতি ১০০ গ্রাম মুরগির কলিজার পুষ্টিগুণ কত?

প্রতি ১০০ গ্রাম মুরগির কলিজায় প্রায় ১৩৫ কিলোক্যালরি, ২৫-২৬ গ্রাম প্রোটিন এবং ৪-৫ গ্রাম ফ্যাট থাকে। এছাড়াও এটি ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১২, আয়রন, ফোলেট, রাইবোফ্লেভিন, নিয়াসিন এবং কপার, জিঙ্ক ও সেলেনিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থে ভরপুর। রান্নার পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।

মুরগির কলিজার উপকারিতাগুলি কি কি?

মুরগির কলিজা ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১২, আয়রন এবং উচ্চ মানের প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস। এটি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করতে, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং শরীরের বিভিন্ন এনজাইমের কার্যকারিতায় সাহায্য করে। এতে থাকা সেলেনিয়াম হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।

মুরগির কলিজাতে আয়রনের পরিমাণ কত?

মুরগির কলিজাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম কলিজায় প্রায় ৯-১২ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়, যা দৈনিক চাহিদার ৫০-৬৬% পূরণ করতে পারে। এটি রক্তাল্পতা প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রান্না করা মুরগির কলিজার পুষ্টিগুণ প্রতি ১০০ গ্রামে কত?

রান্না করা মুরগির কলিজার পুষ্টিগুণ কাঁচা কলিজার মতোই, তবে ক্যালোরি এবং ফ্যাটের পরিমাণে সামান্য পরিবর্তন আসতে পারে রান্নার পদ্ধতির কারণে। সাধারণভাবে, প্রতি ১০০ গ্রাম রান্না করা কলিজায় প্রায় ১৬০-১৭২ কিলোক্যালরি, ২৪-২৫ গ্রাম প্রোটিন এবং ৬-৭ গ্রাম ফ্যাট থাকে। ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের পরিমাণও প্রায় একই থাকে।

মুরগির কলিজার অসুবিধাগুলি কি কি?

মুরগির কলিজায় কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে, তাই হৃদরোগ বা উচ্চ কোলেস্টেরলের রোগীদের এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে শরীরে ভিটামিন এ-এর পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, যা বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদেরও এটি সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

মুরগির কলিজাতে প্রোটিনের পরিমাণ কত?

মুরগির কলিজা প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম কলিজায় প্রায় ২৫-২৬ গ্রাম উচ্চ মানের প্রোটিন পাওয়া যায়, যা শরীরের মাংসপেশি গঠন ও মেরামতের জন্য অপরিহার্য।

প্রতি ১০০ গ্রাম মুরগির কলিজাতে কত প্রোটিন থাকে?

প্রতি ১০০ গ্রাম মুরগির কলিজাতে প্রায় ২৫-২৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

রান্না করা মুরগির কলিজার পুষ্টিগুণ?

রান্না করা মুরগির কলিজাও ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ১৬০-১৭২ ক্যালোরি এবং ২৪-২৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। ভিটামিন এ, বি১২, আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও বজায় থাকে, তবে রান্নার পদ্ধতির কারণে সামান্য হেরফের হতে পারে।

Share This Post

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।